একসময় অ্যান্টিবায়োটিকেই নিয়ন্ত্রণে আসত টাইফয়েড। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া জীবাণু এখন ভয় দেখাচ্ছে নতুনভাবে। পুরোনো সেই রোগই এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রূপে ফিরে এসেছে—যে ব্যাকটেরিয়াকে ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না প্রচলিত ওষুধ।
যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে সম্প্রতি এক উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (UKHSA) তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের ৭০২টি নিশ্চিত রোগী শনাক্ত হয়েছে—যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি এবং এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এই সংক্রমণ যুক্তরাজ্যের স্থানীয় নয়; বরং বেশিরভাগ রোগীই বিদেশ ভ্রমণ শেষে সংক্রমিত হয়ে ফিরেছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো—যেখানে দূষিত পানি ও খাবার এখনো রোগ ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। চিকিৎসকরা বলছেন, টাইফয়েড এমন এক রূপ নিয়েছে যা প্রচলিত ওষুধের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন “ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েড”—অর্থাৎ এমন জীবাণু, যাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
সবচেয়ে ভয়ংকর রূপটি দেখা দিচ্ছে পাকিস্তানে। সেখানে ছড়িয়ে পড়া "এক্সটেনসিভলি ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টাইফি" বা XDR টাইফি কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই সাড়া দিচ্ছে না—অ্যামপিসিলিন, ক্লোরামফেনিকল, ফ্লুরোকুইনোলন কিংবা সেফালোসপরিন—সব ওষুধই ব্যর্থ। এমনকি নতুন প্রজন্মের ওষুধও কাজে আসছে না।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জেসন অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যাকটেরিয়া নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফল দেখায়, ওষুধ-প্রতিরোধী টাইফয়েড দ্রুত বাড়ছে এবং পুরোনো জীবাণুগুলোর জায়গা দখল করছে। উদ্বেগের বিষয় হলো—এই নতুন রূপ এখন আন্তর্জাতিকভাবেও ছড়িয়ে পড়ছে।
১৯৯০ সালের পর থেকে অন্তত ২০০টি আন্তর্জাতিক সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা—এমনকি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও দেখা গেছে এই প্রতিরোধী জীবাণু।
প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা যান—বেশিরভাগই এশিয়া ও আফ্রিকার শিশু।
চিকিৎসকরা বলছেন, এখনও কিছু মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর থাকলেও, তার কার্যকারিতা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। গত তিন দশকে ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে—এখন তারা সেই জিনগত ক্ষমতা একে অপরের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ড. অ্যান্ড্রুজ সতর্ক করে বলেছেন, “টাইফয়েড এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি। জরুরি ভিত্তিতে নজরদারি বাড়ানো, টিকা সম্প্রসারণ এবং নতুন চিকিৎসা কৌশল উদ্ভাবন না করলে এটি মহামারি আকার নিতে পারে।”
সূত্র-জি নিউজ