একটা ছোট্ট গুলি, একটা সীমান্ত পার হওয়া সেনা, অথবা একটা বিস্ফোরণ—এই ছোট্ট ঘটনাই দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে ঠেলে দিতে পারে এক ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি। পাকিস্তান ও ভারতের যুদ্ধ মানে কি শুধু দুই দেশের সংঘর্ষ?

এর প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—পুরো দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি বৈশ্বিক পর্যায়েও এর মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। এই দুই দেশের পারমাণবিক শক্তি থাকার কারণে যুদ্ধের ঝুঁকি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়।

গোলাগুলির আওয়াজ কাশ্মীর সীমান্তে আবার শুরু হয়েছে। আকাশে ঘোরে যুদ্ধবিমান, মাটিতে কাঁপন তোলে ট্যাংক। শত শত সৈনিক সীমান্তে মোতায়েন হচ্ছে। যুদ্ধ শুরু—এবার আর কথা নয়, এবার রক্ত।

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি অনেকগুলো দিক থেকে ভয়ংকর ও জটিল হয়ে উঠতে পারে। দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর, এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক অবস্থানও অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। যেকোনো সামরিক উত্তেজনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়াগুলো যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা আরও বড় সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

"যুদ্ধ মানেই শুধু সৈনিকদের লড়াই নয়, ভেঙে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন। বোমা পড়ে বাড়ির ওপর, হাসপাতাল ভেঙে পড়ে, খাদ্যের সংকট, পানির সংকট। শিশুরা কাঁদে, মায়েরা আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়ায়।"

"কিন্তু ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়? পারমাণবিক অস্ত্রের বোতামে হাত রাখে যদি কোনো এক কমান্ডার? এক মিনিটেই কোটি কোটি প্রাণ ঝরে যেতে পারে। ধ্বংস হবে শহর, গ্রাস করবে পারমাণবিক ধুলো।"

বিশ্ব তখন চুপ থাকতে পারবে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া—সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে। শুরু হবে কূটনৈতিক চাপ, নিষেধাজ্ঞা, দোষারোপ।

"যুদ্ধ শেষে কেউই জয়ী থাকে না—থাকে শুধু ধ্বংস, মৃত্যু আর অনুতাপ। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সময় যতো গড়াচ্ছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আঞ্চলিক রাজনীতি। এতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন নতুন সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

ভারত এরই মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, পানি চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধসহ ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে বড় বড় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। একইসঙ্গে পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ওয়াঘা সীমান্তের প্রবেশদ্বারে পাহারা বাড়িয়েছে। 

পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের লড়াইয়ে কে জয়ী হতে পারে, তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আকার সক্ষমতা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন যুদ্ধে হলে জিতবে কে, ভারত নাকি পাকিস্তান?

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা দেশ ভারতের পয়েন্ট ০.১১৮৪। দেশটির মোট সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৫ হাজার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি। তাই ভারতের রিজার্ভ সেনা সংখ্যার আকারও অনেক বড়। 

অপর দিকে, ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তনের সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০। এতে রিজার্ভ সেনা ২ লাখ ৮২ হাজার।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ট্যাঙ্ক রয়েছে ৪ হাজার ২০১টি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের রয়েছে ২,৬২৭টি ট্যাঙ্ক। 

এ ছাড়া, ভারতের মোট এয়ারক্রাফট রয়েছে ২ হাজার ২২৯টি। অপরদিকে পাকিস্তানের রয়েছে ১ হাজার ৩৯৯টি এয়ারক্রাফট। 

আর ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫১৩টি এবং পাকিস্তানের ৩২৮টি। এ ছাড়া, ভারতের হেলিকপ্টার রয়েছে ৮৯৯টি । পাকিস্তানের রয়েছে ৩৭৩টি হেলিকপ্টার। তবে অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ভারতের ৮০টি পাকিস্তানের ৫৭টি। 

পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ানোর তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানও আছে জানিয়ে গত মার্চ মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্ট। এতে দাবি করা হয়, ভারতের ভাণ্ডারে মজুত রয়েছে ১৮০টি পারমাণবিক অস্ত্র। আর পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে আছে ১৭০টি।

যদিও শক্তির দিক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে আছে। তবে যুদ্ধ শুধু সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করেনা, ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, সৈনিকদের মনোবল সবকিছুই যুদ্ধ জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর বিধ্বংসী সব সামরিক অস্ত্রের যুগে যুদ্ধ কাউকেই জেতায় না। উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধে দুটি দেশকেই পঙ্গু করে দেবে। এমনকি আশপাশের অন্য দেশগুলোর ওপরও যুদ্ধের প্রভাব পড়বে।