ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর দেশটিতে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। নাগরিকদের সতর্ক থাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুই দেশের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দিল্লিতে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস একটি নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়েছে। এতে লালকেল্লা, চাঁদনি চকসহ আশপাশের এলাকা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বড় জনসমাগমে না যাওয়ার, স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর নিয়মিত অনুসরণ করার এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরও একই ধরনের পরামর্শ জারি করেছে। তারা তাদের নাগরিকদের দিল্লিসহ প্রধান শহরগুলোতে ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছে।

মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে—

  • লালকেল্লা ও চাঁদনি চকের আশপাশের এলাকা এড়িয়ে চলুন।
  • জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলুন।
  • স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে আপডেট খবরের দিকে নজর রাখুন।
  • আশপাশের ঘটনাবলীর বিষয়ে সচেতন থাকুন এবং পর্যটক-সমাগম হয় এমন স্থানগুলোতেও সতর্ক থাকুন।

এদিকে বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছে, ‘নয়াদিল্লির ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স বিভাগ তাদের নিরাপত্তা সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, বিস্ফোরণের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়, তবে ভারত সরকার কয়েকটি রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

এর আগে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘আমরা দিল্লির লালকেল্লার কাছে হওয়া বিস্ফোরণের বিষয়ে অবগত আছি। পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে কনস্যুলার সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

অন্যদিকে বিস্ফোরণের ঘটনার পর যুক্তরাজ্য সরকারও ভারতের কিছু অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তর (এফসিডিও) ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব ধরনের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। মূলত সীমান্ত এলাকায় সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা উল্লেখ করে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (যেমন পেহেলগাম, গুলমার্গ, সোনমার্গ, শ্রীনগর শহর ও জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় মহাসড়ক) ভ্রমণ থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। কেবল বিমানে করে জম্মু শহরে আসা-যাওয়া এবং শহরের অভ্যন্তরে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ২০২৩ সালে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে মণিপুর রাজ্য, বিশেষ করে রাজধানী ইম্ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। সহিংসতা মাঝে মাঝে থেমে গেলেও চলতি বছরের মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সেখানে নতুন করে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সময় গাড়িটিতে তিনজন ছিলেন। ঘটনাস্থলে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি আত্মঘাতী হামলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিস্ফোরিত হওয়া গাড়িটি ছিল হুন্ডাই আই-২০ এবং এটাতে তিনজন যাত্রী ছিলেন। আহতদের শরীরে কোনও ছিদ্র বা গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা এই ধরনের বিস্ফোরণে অস্বাভাবিক। সব দিক থেকেই তদন্ত চলছে।’