মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবিরাম বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও, ফিলিস্তিনের প্রতি অটল সমর্থনে তেল আবিবের কাছে ইসরাইলী সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারে সফলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনি বাহিনী। প্রজেক্টাইল এবং একটি ড্রোন ব্যবহার করে এই অভিযান চালানো হয় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইয়েমেনি সেনাবাহিনী। এতে বলা হয়, ‘ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর ইউএভি বাহিনীও অধিকৃত এলাকা ইয়াফায় ড্রোন ব্যবহার করে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তু (ইসরাইলী) লক্ষ্য করে অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানের লক্ষ্য সফল হয়েছে।’ প্রেস টিভি, আনাদোলু , আল জাজিরা, ওয়াফা।
ইয়েমেনি বাহিনী এই অভিযানকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের যোদ্ধাদের বিজয়ের প্রকাশ এবং গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রতিক্রিয়া এবং দেশটির বিরুদ্ধে আগ্রাসনের প্রতিশোধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। দেশটির সেনাবাহিনী আরও বলেছে, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন আগ্রাসন এবং আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধের জবাবে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী লোহিত সাগরে শত্রু যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে।’
বলা হয়, ‘বেশ কয়েকটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করে নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী (ইয়েমেনের) একটি যৌথ সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে এবং দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারকে লক্ষ্যবস্তু করে।’
যদিও এ হামলার দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র একদিনেরও কম সময়ের মধ্যে ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রদেশে প্রায় ৩০টি বিমান হামলা চালিয়েছে, যা দেশটির বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসনকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এ হামলাকে সানার ফিলিস্তিনি-পন্থি অভিযান বন্ধ করার জন্য একটি ‘আত্ম-পরাজিত প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় ইসরাইলী হামলায় একই পরিবারের কমপক্ষে ১১ জন সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা আলজাজিরাকে বলেন, আমরা ইসরাইলী যুদ্ধবিমানের শব্দে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। তাদের হামলা দেইর আল-বালাহ শহরের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল।
গত ১২ ঘণ্টা ধরে এই এলাকাটি ইসরাইলী বিমান হামলার কেন্দ্রস্থল ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, দেইর আল-বালাহ শহরের পশ্চিম অংশে একটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা যে মৃতের সংখ্যা পেয়েছি তা হলো ১১ জন। নিহতরা সবাই একই পরিবারের। কোনো সতর্কতা ছাড়াই তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল।
এদিকে সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলী বাহিনী গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে তাদের হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
হামলায় জীবন্ত পুড়ে মারা গেলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে সাংবাদিকদের একটি তাবুতে ইসরাইলী বিমান হামলার ফলে গুরুতর দগ্ধ সাংবাদিক আহমেদ মানসুর গতকাল মঙ্গলবার মারা গেছেন। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলার পর তাকে জীবন্ত আগুনে জ্বলতে দেখা যায়।
তিনি প্যালেস্টাইন টুডে নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদক ছিলেন। হামলাটি ঘটে সোমবার, নাসের হাসপাতালের পাশে সাংবাদিকদের অবস্থানকারী একটি তাবুতে। হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে মানসুরকে আগুনে পুড়তে দেখা যায়।
সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মানসুর মঙ্গলবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই হামলায় এখন পর্যন্ত দুইজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আরও আটজন আহত হয়েছেন।
ইসরাইলী সেনাবাহিনী সোমবার হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, এই হামলার লক্ষ্য ছিলেন সাংবাদিক হাসান এলসালাইয়েহ, যিনি তেল আবিবের দাবি অনুযায়ী হামাস সদস্য। হামলায় তিনি আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলী অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১১ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করেছে ইসরাইলী বাহিনী। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩,৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এই হামলার মাধ্যমে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তিও ভেঙে গেছে।ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় হামলা আরও বাড়বে। তার এই ঘোষণার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত রয়েছে।
ইসরাইরে বর্বরতা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান ফ্রান্স মিশর ও জর্ডানের
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে মিশর, জর্ডান এবং ফ্রান্স। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহের আমন্ত্রণে কায়রোতে এক বৈঠকে উপস্থিত হন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন এবং জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ। ওই বৈঠক থেকেই ইসরাইলী বর্বরতা বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান তারা। এ খবর দিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা। এতে বলা হয়, তিন দেশের শীর্ষ বৈঠকের নেতৃত্ব দেন মিশরের প্রেসিডেন্ট। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, বৈঠকে সকল দেশের নেতারা অবিলম্বে যুদ্ধবন্ধের আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে এবং অবিলম্বে জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেন তারা।
জর্ডানের রয়্যাল কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিন নেতাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পুনরায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে এর সকল ধাপ বাস্তবায়নের আহ্বানও জানানো হয়েছে। যেন গাজাবাসীর মানবিক সংকট দূর হয়। বাদশাহ আব্দুল্লাহ সতর্ক করে বলেছেন, ইসরাইলের ক্রমাগত হামলা সংকট অবসানের সকল কূটনৈতিক এবং মানবিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল এবং বাধাগ্রস্ত করেছে। যার ফলে গাজাবাসী আঞ্চলিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে সংকট আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আঞ্চলিক শান্তি স্থাপনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ। এ লক্ষ্যে সবরকম রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক তৎপরতা সন্ধানের কথা বলেছেন তিনি। আব্দুল্লাহ বলেছেন, এমন পথ খুঁজে বের করতে হবে যাতে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল উভয় পক্ষই শান্তির সন্ধান পায়। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন দেয়ায় মিশরের প্রশংসা করেছেন জর্ডানের বাদশাহ। এছাড়া গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরব বিশ্বকে সমর্থন দেয়ায় ফ্রান্সকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।