দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সাম্প্রতিক বক্তব্য ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার কারণে দুই দেশের সম্পর্ক আবারও সংঘর্ষের দিকেই যাচ্ছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এক ভাষণে পাকিস্তানকে ‘মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার’ হুমকি দেন।
তার ভাষায়, পাকিস্তান যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সহায়তা বন্ধ না করে, তবে তাদের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই মন্তব্যের জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এমন মন্তব্য কেবল উস্কানিমূলক নয়, বরং সরাসরি যুদ্ধের আমন্ত্রণ।
ভারতের বিমানবাহিনী প্রধান অমর প্রীত সিংও সম্প্রতি দাবি করেন, চলতি বছরের মে মাসে সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভারতীয় বাহিনী ভূপাতিত করেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ তারা প্রকাশ করেননি।
শনিবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর আইএসপিআর এক বিবৃতিতে ভারতের বক্তব্যকে “অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে অভিহিত করে। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত বারবার নিজেদের ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করলেও বাস্তবে তারাই সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, যে কোনো আগ্রাসনের জবাব তারা দ্রুত ও কঠোরভাবে দেবে। তাদের ভাষায়, “প্রয়োজনে শত্রুর সীমান্ত অতিক্রম করেও প্রতিক্রিয়া জানাতে আমরা প্রস্তুত। ভারতের মিথ্যা নিরাপত্তার দেয়াল ভেঙে দেওয়া হবে।”
পাকিস্তানি বাহিনী মনে করিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি বড় ধরনের যুদ্ধে গড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
সে সময় ভারতের সীমান্ত এলাকায় পর্যটকবাহী এক গাড়িতে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে সীমান্তে পাল্টা হামলা চালায়।
জবাবে পাকিস্তান চালায় “অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস”, যেখানে তাদের দাবি অনুযায়ী ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও একাধিক ড্রোন ধ্বংস করা হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে অস্ত্রবিরতি হয়।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রগুলো ভারতের সাম্প্রতিক হুমকিকে “রাজনৈতিক নাটক” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তারা বলছে, “আমরা আগেও জানতাম কিভাবে ভারতকে মোকাবিলা করতে হয়, এবারও প্রস্তুত আছি।” তাদের দাবি, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো ও নতুন যুদ্ধ প্রস্তুতি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক।
এছাড়া পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের কিছু অংশ এখনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে, যদিও এ বিষয়ে কাবুল সরকারকে বারবার অবহিত করা হয়েছে।
দেশটির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ১১৮ জন আফগান-সংযুক্ত জঙ্গি নিহত হয়েছে বলেও জানানো হয়।
পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তারা গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে বলেও জানায় ইসলামাবাদ।
তাদের মতে, পাসনি বন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এবং পাকিস্তানের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে বৈশ্বিক আগ্রহ বাড়ছে।