টানা ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার অধিকাংশ মসজিদ এখন শুধুই ধ্বংসাবশেষ। ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী প্রাচীন স্থাপত্য, সুউচ্চ মিনার আর প্রার্থনার স্থানগুলো এখন মাটি চাপা।

তবু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও থেমে যায়নি আজান; মাইক না থাকলেও গলার স্বরে ডেকে যান মুয়াজ্জিনরা, আর ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের পাশে বসে নামাজে দাঁড়ান স্থানীয়রা।

দ্য ফিলিস্তিন ইনফরমেশন সেন্টার জানায়, দীর্ঘ যুদ্ধ গাজার আকাশচুম্বী মিনারগুলোকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। যেসব মসজিদে একসময় রোজকার প্রার্থনায় মুখর থাকত গাজা, এখন সেগুলো ধুলা আর ভাঙা ইটের স্তূপে পরিণত।

শুজাইয়্যা এলাকার বাসিন্দা আবু খালেদ আল-নাজ্জার জানান, “বাবার কণ্ঠস্বর জানার আগেই মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ চিনতাম। পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে নামাজ পড়ছি। এখন তো মসজিদের পাশে যে গালিচায় বসতাম, সেটাও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গেছে।”

গাজার সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১,২৪৪টি মসজিদের মধ্যে ৮৩৫টি সম্পূর্ণ এবং ১৮০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তালিকায় মামলুক ও অটোমান আমলের বহু শতাব্দীপ্রাচীন মসজিদও রয়েছে।

পুরনো শহরের ঐতিহাসিক গ্রেট ওমারি মসজিদ—যেখানে গাজার ইতিহাস লুকিয়ে ছিল—সেই মসজিদের ধ্বংসাবশেষের পাশে দাঁড়িয়ে ২৭ বছর বয়সী মাহমুদ কান্দিল বললেন, “এই মসজিদ গাজার হৃদয় ছিল। এখন শুধু ধুলো। যেন আমাদের ভবিষ্যৎ নয়, অতীতও মুছে দিচ্ছে তারা।”

আল-দারাজ এলাকার আরেক মসজিদ আল-সাইয়্যিদ হাশিম, যা বহু বছর ধরে কুরআন তেলাওয়াতের প্রাণকেন্দ্র ছিল—সেখানেই ধ্বংসাবশেষের সামনে বসে ৭৪ বছরের উম্মে ওয়ায়েল স্মৃতিচারণা করলেন, “আমি অসুস্থ হলেও প্রতি বৃহস্পতিবার সূরা কাহফ পড়তাম এখানে।

এখন কিছুই নেই, কিন্তু তবুও ঘরে বসে আমরা পড়ব। আল্লাহ জানেন, আমরা কোথায়—সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।