DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী

ইউনেস্কোতে দুই দিনের বিশেষ আয়োজনের পর্দা উঠলো

অনলাইন ডেস্ক
WhatsApp Image 2025-02-21 at 01.56.51_381162ee

ফ্রান্সের ইউনেস্কোতে আজ থেকে শুরু হল দুই দিনব্যাপি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠান। আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন ভাষাবিদ, ভাষা বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী প্রর্যায়ের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী পালন করবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় যা ২০০০ সাল হতে ইউনেস্কো কর্তৃক বৈশ্বিক উদযাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশ দেশে ও বিদেশে অবস্থিত দূতাবাস সমূহের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে।

WhatsApp Image 2025-02-21 at 01.56.51_dc2a6ab2

সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মার্চ ২০২৪ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিসের উদ্যোগে দিবসটির রজত জয়ন্তী পালনের জন্য ইউনেস্কো নির্বাহী পর্ষদের ২১৯-তম সভায় একটি রেজল্যুশন উত্থাপন করা হয় এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই রেজল্যুশনে ইউনেস্কোর ৬৬টি সদস্য দেশ সমর্থন জানায় যা ফলে ইউনেস্কো প্রথমবারের মত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য কূটনৈতিক অর্জন। এই বছরের আয়োজনের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা সংরক্ষণ এবং প্রসারে দীর্ঘ দিন কাজ করে আসা ভাষা বিশেষজ্ঞ, ভাষাবিদ, এবং সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করবেন। কারিগরি এই আলোচনা মূলত তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করবে। এগুলো হলঃ Multilingual approach for peace, Multilingual education in emergency situations and Multilingual education and the use of technology and AI. একইদিনে ইউনেস্কো বিগত ২৫ বছরে দিবসটি পালনের উপর বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করেছে। পাশাপাশি ভাষা ভিত্তিক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের মাতৃভাষা-ভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

WhatsApp Image 2025-02-21 at 01.56.50_8b266ef5

২১ ফেব্রুয়ারি রজত জয়ন্তী পালনের মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন পর্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস-কে Guest of Honor হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউনেস্কো। কিন্তু, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদ দের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশে তিনি প্যারিস ভ্রমণে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং তার বক্তব্য ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় এই বক্তব্য ইউনেস্কো কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানের ওয়েব স্ট্রীমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। এবারের রজত জয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে ইউনেস্কো প্রথমবারের মত মন্ত্রী-পর্যায়ের আলোচনা আয়োজন করেছে। এই আলোচনায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১২ জন মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবে জানান দায়িত্বশীল সূত্র। বাংলাদেশ হতে এই আলোচনায় যোগ দিবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা মূলত দুইটি অধিবেশনে ভাগ করা হয়েছেঃ প্রথম অধিবেশনের প্রতিপাদ্য How multilingual education is building inclusive societies and supporting lifelong learning যেখানে বহুভাষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে অংশগ্রহণমূলক সমাজ গঠনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রতিপাদ্য হল Five years to 2030: How languages and multilingualism can contribute to achieving the sustainable development goals যেখানে বাংলাদেশের মাননীয় উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন। আলোচনাটি ইউনেস্কো কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানের ওয়েব স্ট্রীমের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টা ৪৫ মিনিট হতে রাত ১০তা পর্যন্ত। এই আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে ভাষার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ মাতৃভাষাকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন ও তৎপরবর্তী বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য আলোচনা করবেন।

রজত জয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক soft power কে সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়। আমরা যেই টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছি তার অন্যতম বাধা হল ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট মূলত জাতিসঙ্ঘ হতে প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক নীতি যা জাতিসঙ্ঘের অফিসিয়াল ৬টি ভাষায় অনমুদিত। ফলে বিভিন্ন ভাষাভাষীদের কাছে এই বৈশ্বিক নীতিপত্রটি সহজে বোধগম্য নয়। ফলে এর বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশ জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনে বাংলাদেশ সরকার প্যারিস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে যেই রেজল্যুশনটি গ্রহণ করেছে তার বৈশ্বিক প্রয়োগ রয়েছে এবং অংশগ্রহণ মূলক বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে এই রেজল্যুশনটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে মনে করেন রাষ্ট্রদূত এম তালহা। এছাড়াও, এই প্রথমবারের মত ইউনেস্কো পুরো অনুষ্ঠানটি জাতিসঙ্ঘের অফিসিয়াল ভাষার পাশাপাশি সংকেত ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যা বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তাবিত রেজল্যুশনের অন্যতম আলোচ্য ছিল। সার্বিক বিবেচনায় এই উদ্যোগটি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও প্রসারের বৈশ্বিক কার্যক্রমে অভূতপূর্ব নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট এই অনন্য কূটনৈতিক অর্জনকে স্বীকৃতি জানিয়ে আগামী ২১ ফেব্রিয়ারি ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকের জন্য মনোনীত করেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এই পদক হস্তান্তর করবেন

বিষয়সমূহ