ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি-তে বড় ধরনের নেতৃত্ব পরিবর্তন ঘটেছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং সংবাদ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে সম্প্রচার করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির শীর্ষ পদে ছিলেন টিম ডেভি। একাধিক বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচনার মুখে ছিলেন।

‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর সম্পাদনা

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ সোমবার ফাঁস হওয়া বিবিসির একটি অভ্যন্তরীণ মেমোর তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিবিসির জনপ্রিয় অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘প্যানোরামা’-তে ট্রাম্পের ২০২১ সালের জানুয়ারির এক ভাষণ সম্পাদনা করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলায় উস্কানি দিয়েছেন।

মূল ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা ক্যাপিটল হিলে যাব এবং আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দেব।”

কিন্তু সম্প্রচারে এটি সম্পাদনা করে এমনভাবে দেখানো হয়: “আমরা ক্যাপিটল হিলে যাব… আর আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। আমরা লড়ব। আমরা ভয়ংকরভাবে লড়ব।”

বাস্তবে এই দুটি অংশ ছিল ভাষণের প্রায় ৫০ মিনিট ব্যবধানে। এই সম্পাদনার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর বিবিসিকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর প্রচার’-এর অভিযোগে ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

রবিবার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, “বিবিসি নিখুঁত নয়। আমাদের আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। এই বিতর্কই পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”

বার্তাপ্রধান ডেবোরা টার্নেস বলেন, ‘প্যানোরামা’ বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। নেতৃত্বের জায়গায় দায় শেষ পর্যন্ত আমারই।”

তিনি আরও জানান, “বিবিসি নিউজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট—এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে নেতৃত্বের স্বচ্ছতা রক্ষার জন্যই আমি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকরা এই পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বিবিসিতে এটি “প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সূচনা” হতে পারে। অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পও সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করে বলেছেন, “এটাই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।”

দ্য টেলিগ্রাফের প্রকাশিত মেমোতে আরও দাবি করা হয়, বিবিসির আরবিক বিভাগে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাতমূলক উপস্থাপনার প্রবণতা দেখা গেছে, এবং সেটি দূর করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও সংবাদপ্রধানের পদত্যাগের ঘটনা একেবারেই বিরল। ঘটনাটিকে অনেকেই প্রতিষ্ঠানের জন্য “আস্থার বড় পরীক্ষা” হিসেবে দেখছেন।