‘তোমরা জানো, আমরা ফিলিস্তিনিরা কেন পরিচিত? কারণ, তোমরাই আমাদের শত্রু।’এই কথাটি কোনো অভিযোগ নয়, বরং এক নির্মম সত্য। ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের এই মন্তব্য আজও বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে।

তার ভাষায়, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য ইসরায়েল আমাদের প্রতিপক্ষ। তাদের পেছনে রয়েছে অগাধ সমর্থন। কিন্তু এটিই আমাদের সৌভাগ্যও, কারণ তাদের বিরুদ্ধেই বিশ্ব তাকিয়ে থাকে।’

দারবিশের এই চিন্তা যেন আজকের গাজার জন্য এক আয়না। একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে ক্ষুধা ও ধ্বংসের মধ্যে টিকে থাকা এক জাতি। ত্রাণবাহী ট্রাক লুট হয়, হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই—তবুও তাদের কণ্ঠ আন্তর্জাতিক সংবাদে জায়গা পায় সামান্য সময়ের জন্যই।

বিশ্বের পরাশক্তিরা যখন “শান্তি”র আলোচনার টেবিলে বসে, তখন ফিলিস্তিনি বাস্তবতা রয়ে যায় ধ্বংসস্তূপের নিচে। মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যখন ইসরায়েলের সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন সংঘাতের অবসান হয়েছে তখন গাজার বালুর নিচে এখনো মাটিচাপা পড়ে থাকে শিশুদের দেহ।

সাম্প্রতিক আলোচনাগুলোর গতিপ্রকৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ফিলিস্তিন এখন আর নিজের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণে নেই। সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো ও ওয়াশিংটন। মিসরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকেই স্পষ্ট হয়েছে, এই যুদ্ধবিরতি আসলে কূটনৈতিক এক সমীকরণ, যেখানে মানবিক দিকের চেয়ে কৌশলগত স্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফিলিস্তিনকে এখন একটি “ভূ-সম্পত্তি” বা “রিয়েল এস্টেট” দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হচ্ছে। গাজার মানুষের জীবন ও মৃত্যু যেন আলোচনার কেন্দ্র নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার মানচিত্রে এক টুকরো জমির হিসাব।

এই কারণেই এখনকার সংঘাত কেবল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি এক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থের খেলা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর গোপন সমঝোতাই নিয়ন্ত্রণ করছে যুদ্ধ ও শান্তির গতি।

আর এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি হয়তো যুদ্ধ নিজে নয়, বরং ফিলিস্তিনি সমাজের ভেতরকার বিভক্তি, নেতৃত্বের অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎহীনতা।

মাহমুদ দারবিশ যেমন বলেছিলেন, “আমাদের পরাজয়ই আমাদের পরিচয় দিয়েছে।” আজ সেই কথার অর্থ আরও গভীর। প্রশ্ন শুধু ইসরায়েলের দখলদারিত্ব নয়, প্রশ্ন হচ্ছে, এই লড়াইয়ে ফিলিস্তিন কি নিজের আত্মপরিচয়ও হারাচ্ছে না?