সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন জি প্রজন্মের ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নেপালে। সোমবার সকালের দিকে শুরু হওয়া দেশটির হাজার হাজার ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অন্তত আটজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন হিমালয় কন্যা খ্যাত দেশটির অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভ দমনে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণ এক বিক্ষোভকারী অন্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভেতর থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জনতার আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‌‌আজ আমরা ইতোমধ্যে জয়ী হয়েছি।’’

  • বিক্ষোভের শুরু যেভাবে

বৃহস্পতিবার নেপালের ক্ষমতাসীন সরকার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে, দেশটির সরকারি এক নোটিশে বলা হয়েছিল, আগস্ট ২৮ থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে সচল সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ), ইউটিউব, এক্স, রেডিট এবং লিংকডইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউই আবেদন জমা দেয়নি।

গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিবন্ধনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় দেশটির সরকার। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে নিজেদের অফিস এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল।

বর্তমানে টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিম্বাস এবং পোপো লাইভ দেশটিতে নিবন্ধন করেছে। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেপালে সচল রয়েছে। এছাড়া টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরির নিবন্ধনের আবেদন পর্যালোচনা করছে সরকার।

  • কী বলছেন বিক্ষোভকারীরা?

দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট বলেছে, নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৩৬ লাখ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ হওয়ার পর প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা-বিরোধী আন্দোলন থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

কাঠমান্ডুর ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি।’’

ইক্ষামা তুমরোক নামের ২০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা সরকারের এমন আচরণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু এটি আমাদের প্রজন্মের মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত।’’

  • সরকারের প্রতিক্রিয়া

রোববার দেশটির সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এ ধরনের স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে দেশটির সরকার অনলাইন প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের কাজে ব্যবহারের অভিযোগে টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করে। গত বছর নেপাল সরকার টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল। তবে আগস্টে টিকটক নেপালের আইন মানতে সম্মত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

সূত্র: এএফপি।