পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে বন্ধ করার পর সেই সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির লালকেল্লায় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন মোদি।

ভাষণে মোদি ইঙ্গিত দেন, এপ্রিলে কাশ্মীরে হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখা হবে।

তিনি বলেন, 'যে সময় আমাদের কৃষকরা পানির অভাবে ভুগেছেন, সে সময় ভারতের নদীগুলোর পানি দিয়ে শত্রু দেশ সেচ দিয়েছে। তবে এখন ভারতের পানিতে কেবল ভারত ও তার কৃষকদেরই অধিকার থাকবে।'

কৃষকদের স্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে আর আপস করা হবে না উল্লেখ করে মোদি বলেন, 'রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।'

পাকিস্তানে পানির প্রবাহ আটকানো বা অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা তারা 'যুদ্ধের ঘোষণা' বলে গণ্য করবে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

এ সময় সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারীদের মধ্যে ভারত কোনো পার্থক্য করে না বলে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছেন মোদি। তাছাড়া, ভবিষ্যতে পাকিস্তান যদি কখনো ভারতে হামলা চালায় তাহলে তাদের শাস্তির দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

মোদি বলেন, সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না ভারত। তাছাড়া ইসলামাবাদের 'নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেইল' সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, 'ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর কোনো পারমাণবিক হুমকি সহ্য করা হবে না। অনেক দিন ধরে পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল চলছিল, কিন্তু এখন আর এই ব্ল্যাকমেইল সহ্য করা হবে না।'

তবে আগেও ভারতের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগকে উসকানিমূলক ও উত্তেজনাপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।

২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এরপর ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানও। এতে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় জড়ায় প্রতিবেশি দুই দেশ।

এ ছাড়া, শুক্রবারের ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও তার দেশের কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস না করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

নিষেধ সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় মোদির ওপর চটেছেন ট্রাম্প। সে কারণেই ভারতের ওপর নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কশাস্তি। দিল্লির ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ, পরে আরও ২৫ শতাংশসহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও ভারত সাড়া দেয়নি। মোদি উল্টো বলেছেন, 'ভারত কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করবে না।'