মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে হুথিদের ওপর মার্কিন বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে আরও নয় জন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী গতকাল শনিবার থেকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করেছে মার্কিন বাহিনী।
লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার কারণেই এই বিমান হামলার বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, ইরানের অর্থায়নে এই হুথি ডাকাতরা যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সেনা এবং বন্ধুদের লক্ষ্য করেছে।"
তিনি আরও লিখেছেন, তাদের 'জলদস্যুতা, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদ' এর জন্য 'বিলিয়ন ডলার' খরচ হয়েছে এবং অনেকের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
হুথিদের পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং আরও নয় জন আহত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েল - হামাস যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল যে গোষ্ঠীটি, তারা জানিয়েছে যে তাদের বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার জবাব দেবে।
হুথিরা জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় ইয়েমেনের রাজধানী সানা এবং উত্তরে অবস্থিত সাদা, যেখানে সৌদি আরবের সীমান্তে এই বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
ইরান সমর্থিত এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ইসরায়েলকে শত্রু মনে করে।
সানা এবং ইয়েমেনের উত্তর - পশ্চিমে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এটি দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার নয়।
একটি আনভেরিফায়েড ছবিতে দেখা যায়, সানার বিমান বন্দরের ওপর থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে, ওই এলাকা একটি সামরিক স্থাপনার অন্তর্গত।
একটি বিবৃতিতে হুথিরা ইয়েমেনের রাজধানী সানার আবাসিক এলাকাকে লক্ষ্য করে 'দুষ্টু আগ্রাসনের' জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে দোষারোপ করেছে।
যদিও এটা বোঝা যায় যে যুক্তরাজ্য হুথিদের লক্ষ্য করে শনিবারের হামলায় অংশ নেয়নি। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়মিত জ্বালানি সহায়তা করেছে।
এই হামলা 'সহ্য করা হবে না' বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি আরও যোগ করেছেন, "লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অপ্রতিরোধ্য প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করবো।"
হুথিরা বলেছে, তারা গাজায় ইসরায়েল- হামাসের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কাজ করছে।
তবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে কয়েক ডজন বানিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করে ক্ষেপনাস্ত্র, ড্রোন এবং ছোট ছোট নৌকা দিয়ে হামলা করেছে।
তারা দুইটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, তৃতীয় আরেকটি আটক করেছে এবং চার জন নাবিককে হত্যা করেছে।
বানিজ্যিক জাহাজ রক্ষার জন্য পশ্চিমা যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন অথবা তাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিমানের একাধিক রাউন্ড দিয়ে এই গোষ্ঠিকে নিবৃত্ত করা যায়নি।
ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে চারশো ক্ষেপনাস্ত্র এবং ড্রোন চালানোর প্রতিশোধ হিসেবে দেশটি জুলাই থেকে হুথিদের ওপর বিমান হামলাও চালিয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছিল।
প্রধান শিপিং কোম্পানিগুলোকে লোহিত সাগর ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ প্রায় ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক বানিজ্যিক জাহাজগুলো এই সাগর ব্যবহার করে।
এর পরিবর্তে এখন জাহাজগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার আশেপাশে আরও দীর্ঘ পথ ব্যবহার করে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন যে এক বছরেরও বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী জাহাজ সুয়েজ খালের ভেতর দিয়ে লোহিত সাগরে নিরাপদে যাতায়াত করেছে।
চার মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধ জাহাজ পূর্ব আফ্রিকা এবং আরব উপদ্বীপের মধ্যের সাগর অতিক্রম করেছে।
এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে সুয়েজ খালই দ্রুততম সমুদ্র পথ। এই পথ তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস(এলএনজি) পরিবহনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
হুথিদের সরাসরি সম্বোধন করে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে লিখেছেন, যদি তারা না থামে, "তোমাদের উপর 'নরক বৃষ্টি' হবে যা তোমরা আগে কখনও দেখোনি।"
কিন্তু হুথিরা তাদের প্রতিজ্ঞায় অটল যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আগ্রাসন তারা সমর্থন করবে না।
"এই আগ্রাসন প্রতিক্রিয়া ছাড়া যাবে না এবং আমাদের ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী এই আগ্রাসনের উত্তর আগ্রাসন দিয়েই দিতে প্রস্তুত" বলেছে এই গোষ্ঠী।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেছেন, হুথিদের 'হিতৈষী' ইরান 'নজরে' ছিল।
ইউএস কংগ্রেসের মতে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে হুথিরা লোহিত সাগরে ১৯০ টি হামলা চালায়।
এর আগে, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে নৌ এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল।
পৃথক হামলায় ইসরায়েল হুথিদের সাথে যুক্ত স্থাপনাগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে হুথিদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে ওয়াশিংটন তেহরানকে "পুরোপুরি দায়বদ্ধ করবো এবং আমরা এ বিষয়ে খুব ভালো থাকবো না।"
জো বাইডেনের অধীনে পূর্ববর্তী হোয়াইট হাউস প্রশাসনকে "করুণভাবে দুর্বল" এবং "অনিয়ন্ত্রিত হুথিদের" চলতে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।