DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

ইসলাম

কামানের শব্দ দিয়ে ইফতারের সময় জানানো হয়

আলবেনিয়ার রোমা মুসলিমদের মধ্যেও অনেকটা একই চর্চা রয়েছে। ভেড়া বা ছাগলের চামড়ায় আবৃত লোদ্রা নামের ঐতিহ্যবাহী ড্রামের সঙ্গে বিশেষ গীতিনাট্য দিয়ে তারা রমজানে দিনের শুরু এবং শেষ করে।

qatar-2303260710

শুরু হয়েছে সারাবিশ্বের মুসলমানদের পবিত্রতম মাস রমজান। আরবি বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস রমজান। এই মাসটি মুসলমানদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত পাঁচ ফরজের একটি হলো রোজা, যেটি এ মাসেই পালন করা হয়। ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী মুসলিমরা রোজা রাখলেও সংস্কৃতিভেদে বিভিন্ন দেশে কিছু আলাদা রীতি পালন করা হয়ে থাকে যেগুলোর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।

বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্কে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ‘দাভুল’ নামের বড় আকারের ঢোল পিটিয়ে মানুষজনকে জাগিয়ে তোলে। দুই দিকেই বাজানো যায় এমন ঢোল নিয়ে শহরজুড়ে ঘুরে ঘুরে সেহরির জন্য মানুষদের জাগিয়ে তোলা হয়। এর বিনিময়ে বখশিস পায় তারা। এসময় সেহরিতে জেগে ওঠা মুসলিমরা একসঙ্গে খাওয়ার জন্য তাদের ডাকও দেয়।

আলবেনিয়ার রোমা মুসলিমদের মধ্যেও অনেকটা একই চর্চা রয়েছে। ভেড়া বা ছাগলের চামড়ায় আবৃত লোদ্রা নামের ঐতিহ্যবাহী ড্রামের সঙ্গে বিশেষ গীতিনাট্য দিয়ে তারা রমজানে দিনের শুরু এবং শেষ করে।

মিশর ও জর্ডানে সেহরির আগে এলাকাভিত্তিক কিছু মানুষ প্রতিবেশীদের ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য ডাকেন, আশেপাশের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য ডাক দেয়। ঢোলের মৃদু শব্দের সঙ্গে তারা ডেকে দেয়ার কাজটি করেন।

মরক্কোতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘গান্দোরা’, টুপি এবং একজোড়া চপ্পল পরে প্রার্থনার সুরে ধীর গতিতে হাঁটতে থাকে। সাধারণত শহরের লোকেরাই 'নাফারস' হিসেবে কয়েকজনকে নির্বাচন করেন। রমজানের শেষ রাতে মরক্কোর এই দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য এই ব্যক্তিদের সম্মানী দেয়া হয়।

রমজানের ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি মিশরের ‘ফানুস’। এটি মূলত ধাতু ও রঙিন কাঁচ দিয়ে উজ্জ্বল রঙের প্রদীপ বা লণ্ঠন। ধারণা করা হয়, এই ঐতিহ্যের উৎপত্তি ফাতেমীয় সাম্রাজ্য থেকে শুরু হয়েছিল, যখন খেলাফত আল-মুই লি-দিন আল্লাহ কায়রোতে আসার সময় তাকে রঙিন লণ্ঠন দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। মিশরে রমজানের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে রাস্তা, বাড়ি এবং পাড়া এই লণ্ঠন দিয়ে আলোকিত করা হয়। স্বতন্ত্র নকশা এবং বিচিত্র কারুকার্যের জন্য পরিচিত লণ্ঠন বৈশ্বিকভাবে মিশরীয় রমজানের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ইফতারের পর হালকা মজা করায় কোনো ক্ষতি নেই বলেই মনে করেন ইরাকিরা।আর তাই এসময় তারা খেলেন দেশটির অন্যতম প্রধান একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘মেহাবেস’। একে আংটি খেলাও বলা হয়ে থাকে। বাড়ির বাইরে কেবল পুরুষরা অংশ নিলেও, ঘরের ভেতর নারীরাও এই খেলায় অংশ নিয়ে থাকে। ৪০ থেকে ২৫০ জন পর্যন্ত খেলাটিতে অংশ নিতে পারে।

কামানে তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের সময় হবার বিষয়টি জানানো হয় লেবাননে। এটি সম্ভবত বিশ্বে প্রচলিত রমজানের প্রাচীনতম ঐতিহ্যের একটি। এটি শুরু হওয়ার প্রায় ২০০ বছর পরও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ আজও এই চর্চা চালু রেখেছে, যা 'মিদফা আল ইফতার' নামে পরিচিত।

রমজান শুরু হবার আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালু হয় 'হক আল লায়লা' নামের এক বিশেষ আয়োজন। রমজানের ঠিক আগের মাস অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫ তারিখে। এই দিন শিশুরা রঙিন কাপড় পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যায়। এসময় তারা খারিতা ব্যাগে মিষ্টি সংগ্রহ করে এবং সুর করে বলে ’আতোনা আল্লাহ ইউতিকোম, বাইত মক্কা ইউদিকুম, যার অর্থ ‘আপনারা আমাদেরকে দিন, আল্লাহ আপনাদের পুরস্কৃত করবেন এবং মক্কা পরিদর্শনের তৌফিক দেবেন।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কুয়েতেও এটি পালন করা হয়। তবে তা হয় রমজানের মাঝামাঝি সময়ে তিন দিনের উদযাপন। এসময় শিশুরা তাদের আশেপাশের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তে থাকে এবং মিষ্টি এবং চকলেটের জন্য গান গায়। এই ঐতিহ্যটিকে ‘গারগিয়ান’ বলা হয়।