আপনি আলু খেতে ভালোবাসেন? উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আলুর চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দেখলে নিশ্চয়ই আপনার জিভে জল চলে আসার যাওয়ার কথা!
তাহলেই আপনাকেই বলছি। চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জাতীয় খাবার মুখে তোলার আগে একটু থামুন।
সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, আলুর চিপস মানুষের শরীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। অবশ্য এ কারণে আলু খাওয়াই বাদ দিতে হবে, এমন কোনো কিছু নয়। চিপস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না হলেও আলু সেঁকে, সিদ্ধ করে কিংবা ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে। তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা অনুযায়ী, সপ্তাহে তিনবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়ে, আর সপ্তাহে পাঁচবার খেলে এই ঝুঁকি বেড়ে যায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত।
বিশ্বব্যাপী চাল ও গমের পর তৃতীয় সর্বাধিক খাওয়া খাদ্যশস্য হলো আলু।
যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ৯ জনই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর সঙ্গে দেশটির জীবনযাপনের ধরন, বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাস ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, আলু শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে আলুকে ভেজে চিপস তৈরি করে তা প্রতিনিয়ত খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সাইয়েদ মোহাম্মদ মুসাভির নেতৃত্বে পরিচালিত এক আন্তর্জাতিক গবেষকদল আলু খাওয়ার সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সম্পর্ক পরীক্ষা করেছেন।
এই গবেষণায় ১৯৮৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি চার বছর অন্তর যুক্তরাষ্ট্রের ২ লাখ ৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর পূরণ করা খাদ্যসংক্রান্ত প্রশ্নাবলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে তিনবার আলু বেক করে (সেঁকে), সিদ্ধ কিংবা ভর্তা করে খেলে যেখানে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫ শতাংশ, সেখানে আলুর চিপস খেলে ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
গবেষকরা দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, আলু উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার, এ কারণে এটি খেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও লোড বেশি হয়। সেই সঙ্গে রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতিতে পুষ্টি উপাদানের ক্ষয় ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি একসঙ্গে একটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আলুর পরিবর্তে হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৮ শতাংশ কমে। আর যদি চিপসের বদলে হোল গ্রেইন খাওয়া হয়, তাহলে সেই ঝুঁকি ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলে ভাষ্য বিশেষজ্ঞদের।
হোল গ্রেইন মানে হলো সেইসব শস্য যার ওপরের খোসা, ভ্ৰূণ এবং শস্যের এন্ডোস্পার্ম (পরিপূর্ণ অংশ) অক্ষত থাকে। অর্থাৎ এগুলো পরিশোধন করা হয় না, তাই এসব শস্যের সমস্ত পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ড. কাউথার হাশেম বলেন, আলু অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে পারে, তবে কীভাবে আমরা তা প্রস্তুত করছি সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেদ্ধ করে, সেঁকে কিংবা ভর্তা করা আলু প্রাকৃতিকভাবে চর্বিমুক্ত এবং ফাইবার, ভিটামিন সি ও পটাশিয়ামের উৎস।
তিনি জানান, একই আলু যখন আলু ভেজে চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানানো হয়, বিশেষ করে লবণ দিয়ে ভাজার পরে সেগুলো আর স্বাস্থ্যকর থাকে না। এতে চর্বি, লবণ ও ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা ওজন বাড়াতে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেকোনো আলুর পরিবর্তে সাদা চাল খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটিও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ড. হাশেম বলেন, ‘আলু খেতে সমস্যা নেই, কিন্তু নিয়মিত চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। সম্ভব হলে এগুলোর পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, বুলগার গম, হোল মিল পাস্তা কিংবা খোসাসহ মিষ্টি আলুর মতো স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দেয় এমন খাবার বেছে নিন।’
অবশ্য এই গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক, চিপস খাওয়ার সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সরাসরি কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করে না বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি এবং ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
সূত্র: ইউএনবি