জীবনযাপন
মুখে দুর্গন্ধ হয় যেসব কারণে, যেভাবে দূর করবেন
মুখে দুর্গন্ধ থাকা বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। অনেকেই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। জীবনযাত্রায় ইতিবাচক কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

মুখে দুর্গন্ধ থাকা বিব্রতকর ও লজ্জাজনক। অনেকেই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। জীবনযাত্রায় ইতিবাচক কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। আর এর পেছনে যদি আলাদা কোনো কারণ দায়ী থাকে, তাহলে সেটির চিকিৎসাও প্রয়োজন। আসুন এক নজরে দেখে নেই মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণগুলো।
মুখগহ্বর পরিষ্কার না করা
মুখে দুর্গন্ধ বা নিশ্বাসে দুর্গন্ধের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা হয় খারাপ ওরাল হাইজিন (ব্রাশ না করা, মুখ ঠিকমতো পরিষ্কার না করা)। এছাড়া, আরও একাধিক কারণ রয়েছে যার কারণে দুর্গন্ধ বিরক্তি তৈরি করতে পারে।
মাড়ির প্রদাহ
মাড়ির প্রদাহ (পেরিওডেন্টাল ডিজিজ)-এর কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হয়। প্রতিবার খাওয়ার পর মুখের ভেতরে খাদ্য আবরণ দাঁতের ফাঁকে, মাড়ির ভেতর জমে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্টি করে। পরে তা থেকে মাড়ির প্রদাহ দেখা দেয়। লক্ষণ- খাবারের কণা আটকে থাকা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, ব্যথা হওয়া।
পাইওরিয়া হলে
পাইওরিয়া হলো একটি দাঁতের (কালো এলাকা) দুটি গোড়ার মাঝে হাঁড় ক্ষয়ের রেডিয়োগ্রাফ। দাঁতের নিচে সংক্রমণের কারণে নমনীয় হাঁড়টি ক্ষয় পাচ্ছে, যা দাঁতকে দুর্বল করে দেয়। পাইওরিয়া হলে নিশ্বাসে দুর্গন্ধ ছাড়াও দাঁতও দুর্বল হয়ে পড়ে। পায়োরিয়া সাধারণত দাঁতের চারপাশের কোষে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়।
অত্যধিক চা/কফি খাওয়া
যারা খুব বেশি ক্যাফেইন খান যেমন কফি, চা ইত্যাদি পান করেন, তাদেরও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে শুরু করে। এই পানীয়গুলিতে মিষ্টি এবং দুধ থাকে বলে তা ক্যাভিটি (দাঁতে ক্ষয়ের ফলে গর্ত গয়) তৈরি করতে পারে। ক্যাফেইন বেশি খেলে মুখের লালা শুকিয়ে যেতে পারে। যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি ঘটায়। এবং নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে। দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে দাঁতের স্বাভাবিক রংও ফিকে হয়ে যেতে পারে।
ঠিকমতো না ঘুমানো বা নাক ডাকা
যে ব্যক্তি নাক ডাকেন বা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন তারও এটা হতে পারে। নাক ডাকার সময় মানুষ নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয় এবং লালা শুকিয়ে যেতে থাকে। তাই নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে।
পানি কম পানের অভ্যাস
পানি কম পান করলেও মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আসলে যখন ডিহাইড্রেশন হয়, সেই সময় মুখ শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে মুখের লালা কমে যায় এবং মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে থাকে যা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
পেট পরিষ্কার না হওয়া
যাদের পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় যাদের, তাদেরও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বেরোতে পারে। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্লাক্স এবং অন্ত্রের সমস্যা থাকলেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। কারণ পরিপাকতন্ত্র ও অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড তৈরি হয়। যার ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বেরোয়।
এছাড়াও কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা থাকা যেমন- নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া, লিভারের সমস্যা, টনসিলজনিত সমস্যা ইত্যাদি।
মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাসগত সমস্যা
এর ফলে মুখের থুথু কমে যাওয়া- থুথু মুখের ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন বন্ধ করে কিন্তু রমজানে থুথুর পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়াগুলোর দ্রুত প্রজনন হয়ে থাকে, যা দুর্গন্ধের কারণ হয়।
দীর্ঘ সময় কিছু না খাবারের কারণে ও জিহ্বা পরিষ্কার না করার কারণে জিহ্বার উপর সালফারের প্রলেপ পড়ে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ইনসুলিন তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, যে কোনও ধরনের ওষুধ সেবনেও নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
নিশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করেন। এলাচ খান। মৌরি চিবোন। সব সময় এই ঘরোয়া উপায় মানলেও উপরোক্ত অভ্যাসগুলোর পরিবর্তন না করলে এই সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায় না।
করণীয়:
* দৈনিক কম করে হলেও ৩ থেকে ৪ লিটার গ্লাস পানি খেতে হবে।
* ফলমূল, শাকসবজি, দইজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত।
* লেবু, জাম্বুরা, কমলা, কামরাংগা, মাল্টা ও আনারসের শরবত পান করা।
* গাজর, শসা, টমেটো, আমড়া ও আমলকি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা।
* মুখ ও দাঁতের সঠিক পরিচর্যা করা। খাবারের ৩০-৬০ মিনিট পর ব্রাশ করা
* প্রতি রাতে ১ বার ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
* মেনথল গাম ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া যেতে পারে।
* নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করা।
* মুখ ও দাঁতের অসম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্পন্ন করে নেওয়া, যাতে খাবার না জমতে পারে।