কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো: সাদাপাথর লুটকান্ডের পরও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা সিলেট বেড়াতে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর, গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নেমেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গোপূজো উপলক্ষ্যে টানা চারদিনের ছুটি কাটাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা দর্শকদের ভিড়ে হোটেল-মোটেল, বাস-টার্মিনাল, রেল-ষ্টেশন লোকে লোকারণ্য। টিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। টানা চারদিনের ছুটিতে রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিলেটে এক্সট্রা কোন ট্রেনের বগী না লাগানোর কারণে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে পর্যটকদের। ছয়লেন রাস্তার কাজের কারণে বাসে যেতে সিলেট থেকে ঢাকা ১৮-২০ ঘন্টা লাগে, এরপরও থেমে নেই পর্যটকরা। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ প্রতিবেদক এর কাছে।
সিলেট জেলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পর্যটন স্পট প্রতিদিনই টানে হাজারো দর্শনার্থীকে। দুর্গোৎসব ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের অবকাশে সেই পর্যটনপ্রবাহ এবার যেন বহুগুণে বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজারো ভ্রমণার্থী ছুটে আসেন সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখাল ও সাদা পাথরে।
গত বুধবার বিকেল থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকের ঢল নামে। পাহাড়, নদী, ঝরনা আর পাথরের টানে দলবেঁধে মানুষ ভিড় জমায় প্রকৃতির কোলে। মেঘলা আকাশ ও মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ভ্রমণপিয়াসীদের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় প্রকৃতির কন্যা জাফলংয়ে। পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আসা ভ্রমণার্থীরা নৌকায় চড়ে খাসিয়াপল্লি, চা-বাগান ও ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে দেখেন। কেউ ছবি তোলেন, কেউবা নদীর ধারে সময় কাটান।
হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ আগে থেকেই বুক থাকায় অনেক পর্যটককে বিকল্প থাকার ব্যবস্থা নিতে হয়। রেস্টুরেন্ট, ফটোগ্রাফার ও দোকানিদের ব্যস্ততাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্রি বেড়েছে আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
ঢাকা থেকে এসেছেন বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক বেনজীর আহমদ তার একমাত্র পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি দৈনিক সংগ্রামকে জানান, “টানা ছুটি পেয়ে পরিবারকে নিয়ে জাফলংয়ে ঘুরতে এসেছি। পাহাড়, নদী আর ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। অনেক দিন পর প্রকৃতির এত কাছে এসে ভালো লাগছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের যদি সিলেট থেকে ঢাকা ও সিলেট থেকে চট্রগ্রাম কমপক্ষে একটি করে এক্সট্রা ট্রেনের বগী লাগাতো তবে যাত্রীসাধারণ উপকৃত হত। আগামীতে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ মনোযোগ দিবেন বলে মনে করেন এই সিনিয়র সাংবাদিক।”
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশও ছিল সক্রিয়। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের ইনচার্জ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থী তপন তালুকদার দৈনিক সংগ্রামে জানান, “পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটন এলাকার সকল পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যটকেরা যাতে নিশ্চিন্তে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে পুলিম কাজ করে যাচ্ছে করছি।”
সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে জানান, “টানা চারদিনের ছুটিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের টিকেট সরবরাহ করতে সিলেট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ খুবই আন্তরিক। কিন্তু টিকেটের চেয়ে যাত্রীসাধারণ বেশী থাকায় অনেককে টিকেট দিতে না পারায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমার সাধ্যমতো টিকেট যাত্রীসাধারণের কাছে প্রদান করা হয়েছে।”