শারমিন নাহার ঝর্ণা

কক্সবাজারের নাম শুনলেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। চকচকে বালু আর অসীম দিগন্ত। কিন্তু এই কক্সবাজার শহরের আসল সৌন্দর্য হলো ইনানী বিচ। সম্প্রতি ঘুরে এলাম এই মনোমুগ্ধকর সৈকত থেকে, আর ফিরে এসে মনে হলো আল্লাহতায়ালা প্রকৃতিকে কত নিখুঁতভাবে এখানে সাজিয়ে রেখেছেন।

ফজরের নামায পড়ে নাস্তা খেয়ে আমরা হোটেল থেকে বের হয়ে একটা অটো রিজার্ভ ভাড়া করে রওনা দিলাম ইনানী বিচের পথে। কক্সবাজার শহর থেকে ইনানী পর্যন্ত সমুদ্রতীর ঘেঁষে চলা মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্রতিটি বাঁকে মনে হচ্ছিল অন্য এক জগতে প্রবেশ করছি। এক পাশে ঘন সবুজ পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে জড়িয়ে আছে হাজার বুনোফুলের গাছ। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে বুনোফুলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। অন্যপাশে সমুদ্রের জলরাশি এই পথ চলার অভিজ্ঞতাই যেন ভ্রমণের অর্ধেক আনন্দ। ইনানী সৈকতে পৌঁছেই প্রথম যে জিনিস চোখে পড়ে তা হলো অসংখ্য প্রবাল পাথরের সারি। রোদ ওঠার সাথে সাথে এই পাথরগুলো রঙ পাল্টাতে থাকে, কখনও বাদামি, কখনও গাঢ় কালো, আবার কখনও সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করে সোনালি রঙে। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে সমুদ্রের ঢেউ এসে আঘাত করে তৈরি করেছিল ছোট ছোট জলধারা, যা দেখতে অপূর্ব। এই পাথরগুলোই ইনানী বিচকে অন্যান্য সৈকত থেকে আলাদা করেছে এবং নিজস্ব সৌন্দর্যকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। সমুদ্রের ঢেউ এখানে যেন একটু বেশি উচ্ছ্বসিত। দিগন্তজোড়া জলের গর্জন মনকে উদাস করে দেয়। সেই ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে মনে হলো সমুদ্র যেন তার মনের জমানো কথাগুলো ঢেউয়ের মাধ্যমে খুব কাছে এসে শুনিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় ঢেউ পাথরের গায়ে আছড়ে পড়ে ফেনার ফুল তৈরি করছিল। সেই দৃশ্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও মন ভরছিল না। সমুদ্রের এই গর্জন জাগিয়ে তুলছিল ভ্রমণপিপাসু মনকে। পাথরের ওপরে বসে দূরের আকাশ আর সাগরের সৌন্দর্য দেখছিলাম। আকাশে ভেসে চলা তুলোর মতো মেঘ, আর নিচে গর্জনরত সমুদ্র এই দুইয়ের মিলনে তৈরি হয়েছিল অসাধারণ এক দৃশ্য। এত সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দী না করে কি আর পারা যায়, অনেকগুলো ছবি তুলে রাখলাম। ইনানী বিচের আরেকটি অপরূপ সৌন্দর্য দৃশ্য হচ্ছে লাল কাঁকড়া, এখানে বালুর মধ্যে অনেক ছোট বড় লাল কাঁকড়া হেঁটে বেড়ায় মানুষের পায়ের শব্দ শুনলে তাড়াতাড়ি গর্তে ঢুকে পড়ে। ইনানী বিচের বিকেলটাও বেশ রঙিন ছিল। সূর্যের আলো যখন একটু হেলে পড়ে যায়,পুরো সৈকত সোনালি আভায় ঝলমল করে ওঠে। পাথরের ওপর পড়া আলোতে রঙের খেলা দেখতে খুবই ভালো লাগে। সূর্যাস্তের ঠিক আগে আকাশ রং বদলাতে থাকে লাল, কমলা, বেগুনি আর নীলের দারুণ মিশে তৈরি হয় এক অপূর্ব দৃশ্যপট। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল,প্রকৃতি যেন নিজের সেরা রূপটিই তুলে ধরেছে আমাদের সামনে। ইনানী বিচের সৌন্দর্য অতুলনীয়।

এখানে প্রচুর ভিড় তুলনামূলকভাবে। পায়ের নিচে পাথরের শীতলতা আর কানে সমুদ্রের গর্জনের শব্দ এই দুয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয় এক অনন্য অনুভূতি। ফিরে আসার সময় মনে হচ্ছিল,যেন মনটা কোথাও আটকে গেল ইনানী বিচের ঢেউয়ের গর্জনে,পাথরের রঙে আর নীল আকাশের অথৈ সৌন্দর্যে। কক্সবাজারের এই অংশটি সত্যিই এমন একটি জায়গা,যা একবার দেখলে বারবার মনকে টানে। ইনানী বিচ ভ্রমণ আমার জীবনে নতুন এক সৌন্দর্যের স্মৃতি হয়ে রইল হৃদয় পটে।