খুলনায় অঘোষিত বিনোদন কেন্দ্র ৬-৭ নং ঘাট, শহীদ হাদিস পার্ক, রূপসা সেতু ও ময়ূরী আবাসিক এলাকায় ঈদে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তিব্র তাপ উপেক্ষা করে শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ ভিড় করেছেন এসব বিনোদনকেন্দ্রে। ঈদের চতুর্থ দিনেও (মঙ্গলবার) এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এ চিত্র চোখে পড়ার মতো। এছাড়া ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক, বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্ক এবং খুলনা রিভারভিউ পার্ক সহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও প্রচুর মানুষের সমাগম। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে কয়েকটা দিন পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন সবাই। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে মহানগরীর কোলঘেঁষা ভৈরব নদের ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকা ও খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে। কারণ ভ্যাপসা গরমে কিছুটা প্রশান্তির জন্য মানুষ ছুটছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে। এখানে আসা মানুষজন ঘণ্টাচুক্তি ঈঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুরছেন। নদীর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন বেঞ্চে বসে নদীর নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করতে দলবেঁধে ছুটে আসছেন সবাই। ট্যুরিস্ট পুলিশের খুলনা জোনের পরিদর্শক সুমীর কুমার সরকার বলেন, ঈদ ছাড়াও এমনিতে খুলনাসহ আশপাশের মানুষ এখানে বেশি আসে। তবে ঈদের সময় ভিড় বাড়ে কয়েকগুন। এখানে ঘুরতে আসা মানুষদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করি। খুলনার ফুলবাড়িগেট থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠছে। তাই কিছুটা প্রশান্তির জন্য বন্ধুদের নিয়ে এই প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা। এখানে সুন্দর একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ এখানে এসে উপভোগ করা যায়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই আসেন এখানে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা কেডিএ’র ময়ূরী আবাসিক এলাকায় এখনও কোন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় মুক্ত আবহাওয়ায় একটু প্রশান্তিতে ঘুরতে দেখা গেছে বন্ধু-বান্ধবসহ অথবা স্বপরিবারে। খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে ঘুরতে আসা প্রিক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থী শামিম আহমেদ বলেন, আমি আর আমার বাবা মায়ের সাথে এখানে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসছি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে। খুলনার উল্লাস পার্ক, যা আগে মজগুনী পার্ক নামে পরিচিত ছিল। পার্কের প্রবেশমূল্য ১শ’ টাকা। ঈদের ছুটিতে এ পার্কটিও জমজমাট হয়ে উঠেছে। খালিশপুর এলাকার চিত্তবিনোদনের একমাত্র স্থান ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক।
যেখানে এখন লোকে লোকারণ্য। পার্কটিতে ফ্যামিলি কোস্টার, জেট কোস্টার, সুউচ্চ ওয়ান্ডার হুইল, বৃহৎ মেরি গো রাউন্ড সোয়ান ট্রেন, কিড রাইডস ও ওয়াটার পুল রয়েছে। যে কারণে শিশুদের পছন্দের জায়গা এ পার্কটি।বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্কটি নিরাপত্তা বেষ্টিত খুলনার একমাত্র চিড়িয়াখানা। যেখানে দেখা মেলে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, কুমির, হরিণ, বানর, হনুমান, অজগর সাপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। ঈদের ছুটিতে এসব বন্য প্রাণী দেখতে দল বেঁধে ছুটছেন মানুষ।
নান্দনিক সৌন্দর্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর কারণে রূপসা সেতু বরাবরই খুলনার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সবার গন্তব্য যেন রূপসা সেতুতে। রূপসা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিকেল হলেই দলবেঁধে সেতুতে আসছেন মানুষ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে খুলনা রিভারভিউ পার্ক। শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিকতা ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অন্যতম স্থান এ পার্কটি।
ঈদের ছুটিতে সবুজে ঘেরা এ পার্কে হাজারো দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। পার্কটিতে রয়েছে বনজ, ফলদ ও শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রয়েছে কৃত্রিম লেক। পার্কের প্রবেশদ্বারের এক পাশে রয়েছে পার্কিং প্লেস ও অপর পাশে প্লাজা। খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকায় রূপসা নদীর তীরে ৪৩ একর খাস জমিতে নির্মিত পার্কটিতে কোনো প্রবেশ মূল্য না থাকায় নগরবাসী ছুটছেন এখানে।