মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : মাত্র দুইজন যুবক। চোখে-মুখে বিশ্বজয়ের নতুন স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাঁটিহাঁটি করে পা বাড়ায় এই দুই স্বপ্নবাজ। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগ্নে। কথায় আছে ‘মামা ভাগ্নে যেখানে আপদ নাই সেখানে’। সামারুখ হোসেন আর তার ভাগ্নে লিটন হোসেন খান। সামারুখ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইসিটি আর লিটন হোসেন খান কুয়েট থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে লেখা পড়া শেষ করে ঢাকায় গড়ে তোলে আইটি ফার্ম।
তাদের দুজনের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলাধীন খোকসা উপজেলার অবারিত অরণ্যে ঘেরা শিমুলিয়া গ্রামে। গ্রাম বলতে অজো পাড়া গাঁ। চারিদিকে ফসলের মাঠ আর বন বনানীর গাঢ় ছায়া। পাশে বড় একটা জলাশয়ে লাল পদ্ম শাপলা আর জলের বুকে পানকৌড়ির উড়াউড়ি। এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রামে সামারুখ বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন ও ভাগ্নে লিটনকে নিয়ে চল্লিশ বিঘা জমির উপর ২০২২ সালের জুন মাসে গড়ে তুলেছেন ‘ইউটিউব ভিলেজ’ যা এখন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও এই শিমুলিয়া গ্রাম দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। গ্রামটি এখন গ্লোবাল ভিলেজে রূপ লাভ করেছে। মূলতঃ ইউটিউবের থেকে আয় ও ব্যয় হওয়ায় এর নাম যথাযত রাখা হয়েছে।
তারা প্রথমে পাড়া গাঁ শিমুলিয়াতে অনেক রাঁধুনী দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করে গ্রামের মানুষদের খাওয়াতো। সে সব দৃশ্য ধারন করে তাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘এ্যারাউন্ড মি বিডি’ এবং ‘ভিলেজ গ্রান্ড পা কুকিং’ এ পোস্ট করতো। শুরু থেকেই অনেক ভিউ। এছাড়া আরো কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলও তাদের আছে। দুটো চ্যানেলে তাদের সাবস্ক্রাইবার যথাক্রমে ৫০ লক্ষ এবং ২০ লক্ষ ৫০ হাজার।
গ্লোবাল ভিলেজ পার্কে প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। পার্কটির অবস্থান রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহা সড়কের পাশে কুষ্টিয়া জেলার খোকসার বিলজানী বাজার থেকে উত্তরে দুই কিলোমিটার দূরে শিমুলিয়া গ্রামে। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি রাইড। শিশুদের জন্য আছে ফ্রিতে রাইডের সুযোগ।
বোট, ওয়াচ টাওয়ার, নান্দনিক সেলফি পয়েন্ট, দেশী বিদেশী হাজারো ফলের বিশাল বাগান, গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্ট্যাটু, পিকনিক স্পট, লেক, লেকের উপর সেতু, রেলগাড়ি, দোলনা, স্লিপ রাইড, বাউন্স রাইড, কৃত্রিম ঝর্ণা, বিভিন্ন পশু-পাখীর মডেল, বড় বড় বৃক্ষের ছায়ায় পরম শান্তি সারাক্ষণ। দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ পথ প্রথমেই নজর কাড়ে সবার। সারা বছরসহ শীত মওসুমে শিক্ষা সফর আর পিকনিক করতে আসা বাসের ভিড় লেগেই থাকে।
বর্তমানে ইউটিউব ভিলেজে কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ৫০ জনের বেশী। তাদের মাসিক বেতন বাবদ খরচ হয় ছয় লক্ষ টাকা। সপ্তাহে দুই তিন দিন রান্নার আয়োজন চলে। রান্নাতেও আছে বৈচিত্র। গ্রামের মানুষদের নিয়ে চলে খানাপিনার এক মহা আনন্দযোগ।
পার্কটির পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বললেন, আমাদের আরো অনেক কর্ম পরিকল্পনা আছে। আশা করি বহু মানুষের কর্ম সংস্থানের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করতে পারবো। আমরা আরো রাইড বাড়ানোর
চেষ্টা করছি।
পার্কে প্রবেশ করে মনটা শরৎ’র কাশ ফুলের মতো শুভ্র হয়ে দর্শনার্থীদের সব সময়। একটা দমকা হাওয়ায় গোটা ইউটিউব পার্ক যেন তালি বাজিয়ে নেচে উঠে। পার্কে ঢুকলেই সৃষ্টি হয় এক মনোমুগ্ধকর ঐক্যতান সঙ্গীত। অনেক কিছুই দেখার আছে। আছে শান্ত-শীতল গ্রাম প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য। ছন দিয়ে ছাওয়া চালা ঘরে কান পেতে শুনবেন পাখিদের ডাক নানা তালে নানা শুরে। ভ্রমণ পিয়াসী আপনিও গ্রাম্য পরিবেশের এই ভিলেজে এসে একটু সুস্থ্য বিনোদন নিতে পারেন।