ওমর বিশ্বাস

বিষয়টা প্রথমে নজরে আসে তাদের এক বন্ধুর। তারা রাত্রে সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। তার একটা বিষয় সন্দেহ হয়। একদিন ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছে। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সেখানে এলিয়েনরা আছে সেই এলাকায় রীতিমতো ভূতুড়ে অবস্থা। আসিফদের বারবার করে সতর্ক করে দেওয়া হয় তারা যেন সাবধানে থাকে। কোথাও যেন না যায়। ঘর থেকে বের হবে না। স্কুলে পর্যন্ত যাওয়া বন্ধ।

কিন্তু আসিফরা থাকে নির্লিপ্ত। পরিবারগুলোতে আতঙ্ক আরো বাড়ে। কি করবে দিশেহারা হয়ে যায়। এ ব্যাপারে কারোরই কোনো সুষ্পষ্ট ধারণা নাই। তাছাড়া সবাই গল্প শুনে শুনে ভীত হয়ে পড়ে। যারা এটাকে পাত্তা দিতে চায় না তাদের উল্টো ধুয়ে দেওয়া হয়। এর জন্য অনেকে মুখ না খুলে চুপচাপ নিজের মতো চলে। কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না।

আসিফরা কি করবে ঠিক করতে পারে না। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছে ঠিকই, তবে এখনো কোনো লাইনে আসতে পারেনি।

আজো তারা বসেছে নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে। তারাও তো কিছুই জানে না। তবু তারা একধরনের মজা পায়। ওদের বুকের ভিতর কেউ যেন একটা মজার বাক্স রেখে দিয়েছে। ওটা নিয়ে ওরা এমনি এমনিই নাড়াচাড়া করছে। ব্যাপারটা এরকম হয়েছে তাদের কাছে। তাই কারোর সাথে কারোর দেখা হলেই একথা সে কথার পর ঘুরেফিরে ই লাল গোলক নিয়ে আলোচনা শেষ হয়।

তারা যে ক্লু বন্ধু রিফাতের কাছে পেয়েছে তা ধরে এগোবে কিনা বুঝতে পারছে না। রিফাত রাতে শোঁ শোঁ শব্দ শুনেছে। যে জানে না কিসের আওয়াজ। তবে ফাঁকা মাঠটা তার কাছে রাতের অন্ধকারে কেমন যেন ভরাট ভরাট লেগেছিল। তার মনে হলো ওখানে জায়গাটাতে মনে হয় কিছু একটা আছে যার ফলে মাঠকে শূন্য শূন্য মনে হয়নি। এর আগেও সে দুই একবার রাতে ওখান দিয়ে গেছে। কিছুই মনে হয়নি। তখন কেমন যেন লাগছিল ওখানটায়। এখানেই ওর সন্দেহ হয়।

এই কথা শোনামাত্র সবাই তার দিকে খুব আগ্রহ নিয়ে তাকালো।

ওরকম আওয়াজ পাচ্ছিলাম আর মাঠটা ভরাট ভরাট লাগছিল Ñ একথা সে সবার সামনে বলল।

কয়টা তখন। আসিফ জিজ্ঞেস করে।

রিফাত বলে, দোস্ত এগারোটা হবে। আমরা দাওয়াত খেয়ে ফিরছিলাম। বুঝিস তো, ওই দিক এমনিতেই নির্জন। কেউ সাধারণত কাজ ছাড়া যায় না। আমার কেন জানি বুকটা ধড়ফড় করছিল। কোনো কারণ ছাড়াই। আব্বা-আম্মা আমরা সবাই ছিলাম। তাও কেমন জানি লাগছিল। মাঠটার ওইদিকে একটু ঘুটঘুটে ছিল।

তুই কি ভাবলি, তাজিন জানতে চায়।

আমি তো ভাবছি আমার এরকম লাগছে কেন। আর কিছু ভাবছিলাম না।

তারপর রিফাত বলতে থাকে, ভাবছিলাম শরীর খারাপ করলো কিনা। খাওয়াদাওয়া তো ভালোই হয়েছিল। বলেই নিজে নিজে হাসতে লাগলো।

তাইলে? তাজিন আবার প্রশ্ন করে।

বাসায় আসার পর কেন যেন আমার মনে হলো লাল আলোর কথা।

তোর মন ওরকম করলো কেন। তাজিন প্রশ্ন করে যাচ্ছে।

আমি কি জানি। বিরক্ত হয় রিফাত।

আসিফ ওদের থামায়। প্রস্তাব করে, পরশু তো স্কুল বন্ধ। আমরা ওখানে গেলে হয় না। সিয়াম এতোক্ষণ শুনছিল। তার আর সহ্য হলো না। সে বলল, পরশু কেন? কাল কি সমস্যা?

তারা শেষে সিদ্ধান্ত নিলো, যেহেতু তাদের বাসা থেকে একটু দূরে ওই মাঠটা, যেতে আসতে সময় লাগবে। তাই বন্ধের দিন যাওয়াই ভালো। না হলে দেরিতে বাসায় ফিরলে বকাঝকার সম্ভাবনা আছে। সবার খবর হয়ে যাবে।

এরমধ্যে রিফাতকে দেখিয়ে সিফাত বলে উঠল, ওর দেরি হলে আমাকেই আবার তলব করবে ওর বাসা থেকে। হাজির হতে হবে কৈফিয়ত নিয়ে।

সিফতের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। (চলবে)