ওমর বিশ্বাস

এলিয়েনরা জেনে ফেলেছে আসিফের নাম। আসিফই মূল হোতা। তারা এতো বেশি অবাক হয়েছে বুঝতে পারছে না যে কি করে এই অভেদ্য ব্যূহ ভেদ করে মানবসন্তানরা তাদের নিরাপত্তা বলয়ে ঢুকে পড়ল! যে বলয় নিয়ে তারা গর্ব করে আর এই গর্বেই তারা পৃথিবীতে আসার প্রেরণা পেয়েছে তা কিনা আজ আক্রান্ত! তারা জানে এক আসিফ জানা মানে আস্তে আস্তে একে একে আরো অনেকের জানা। এক সময় সবাই জেনে যাবে। তখন বিষয়টা ছড়িয়ে পড়বে। আমরা আমাদের টার্গেট পূরণ করতে পারব না। তারা তো মানুষ আর সম্পদ নিতে প্রথম অভিযানে আসে। এরপর পৃথিবীকে দখল আর নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তারা নেবে।

একজন মানব সন্তান এটার ভিতর কীভাবে আসতে পারল? যদিও এখন তারা তাদের ছিদ্রটা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এই ছিদ্রটা সম্পর্কে আসিফ তখন পর্যন্ত কোনোকিছু জানে না। আসিফের সত্যিকার অর্থেই কোনো ধারণা নাই। দুনিয়া কতকিছুই তো হয় সব কি সবাই জানে? তবে কখনো কেউ না জানলেও আপনাআপনি বিপদে পড়ে যেতে পারে। সে রকম আসিফ কিছুই জানে না, কিন্তু সে বিপদে পড়ে গেছে। তাদের টার্গেট আসিফ। তারা আসিফকে যে করেই হোক এখান থেকে তুলে নিয়ে যাবে। তারা আসিফের পিছনে লোক লাগিয়ে দিচ্ছে। এর জন্য নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের একটা বড় সমস্যা হলো তারা দিনের বেলায় আসে না। আর দিন সম্পর্কে তাদের স্টাডি রাতের চেয়ে কম। ফলে তারা তাদের কর্মপরিকল্পনা পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করে।

আসিফের লোকেশন বের করতে তাদের বেশ সময় লেগেছে। অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক। অনেক গবেষণাও করা হয়ে গেছে। কিন্তু কোথা থেকে এটা ঘটেছে তা কেউ বের করতে পারছিল না। সে জন্য তারা ছিল খুবই বিরক্ত আর অস্থির। কোনোভাবেই তাদের গাণিতিক সূত্র মিলছিল না। তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হলো হুট করে এক রাতে।

সেদিন রাতে বৃষ্টি হলো। বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল দেশের ও এলিয়েনদের উভয় আবহাওয়া পূর্বাভাসে। হঠাৎ করে ঝড় হলো। এরপর থেমে থেমে বৃষ্টি। তাদের একটা দল ওই রাতে শহরের খুব কাছে চলে আসে। এর মধ্যে আবার ঝড়। একেকটা গাছ একেকটা গাছের সাথে টাক খায়। এভাবে চলছে।

আসিফ পড়ছিল। বৃষ্টির জন্য বইখাতা বন্ধ করে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রাত হয়েছে। আর পড়বে না ঠিক করে। আড়মোড়া ভেঙে মানুষ পড়তে বসে আর আসিফ আড়মোড়া ভেঙে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় সে বাহিরে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে খেলা করছিল। আজো একটা নারকেলের ডগা তার পাতা ছড়িয়ে দিয়ে বাতাসে দুলছে। কখনো আসিফের জানালার লোহার শিকে আটকে যায়। কখনো সেটা একা একা দোলো। আসিফ মুগ্ধ হয়ে বৃষ্টি দেখে। তার এই রাতটা খুব ভালো লাগে।

এভাবে কিছুক্ষণ এলোমেলো সময় কাটছিল। টেবিলের উপর সেই তামার তারগুলো এখনো পড়ে আছে। সে ওগুলো নিয়ে খেলা করে। নাড়াচাড়া করে। (চলবে)