পথিক মোস্তফা
০৬.
আমরা নফসের ধোকায় পড়ে পাপসাগরে ডুবে যাই। এ নফস নামক নেকড়েটি আমাদের মধ্যে বিচরণ করে আপনজনের মতো। নানান ভুলভাল বুঝিয়ে আমাদেরকে করে বিপথগামী। এ নফস সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেন- ‘আর আমি নাফ্সকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নাফ্স মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন- ‘নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে (নাফস) কলুষিত করেছে।’ আর তাই কবি নয়ন আহমেদ তাঁর নফস সম্পর্কে বলেন-
একপাল মেষের মধ্যে বিচরণ করে
আমার অন্তর।
কতো অনুনয় করি:
খাবি সবুজ তৃণের মতো মিহি ভোর।
শাপলা-সুন্দর হয়ে হাসবে কামনা।
.................
হায়, মেষের আবরণে নেকড়ের মধ্যে বিচরণ করে
আমার অন্তর।
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া দুনিয়ার অশ্রু-ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি লাভ কিংবা আনন্দানুভব কোনোটাই পাওয়া সম্ভব নয়। তাইতো আল্লাহ মানুষকে শিখিয়ে দেন ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ এ পৃথিবীর এতো যে হাহাকার চারদিকে তা থেকে বাঁচার জন্য একমাত্র উপায় হলো মহান রবের কাছে বিনয়ী হওয়া। তাঁর কাছে অশ্রুসিক্ত হওয়া, নতমস্তক তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা, যেমনটা করেছিলেন নবীগণ। যেমনটা কবি নয়ন আহমেদ বলেনÑ
হাহাকার ক্যানো চারদিকে?
অবিমিশ্র ক্রন্দন ক্যানো?
দুটো জারুল ফুলের মতো মেলবে না
সুষুপ্ত সৌন্দর্য? বিনয়?
..........................
যেনো কয়েকটা স্ট্রবেরি দুলছে হতাশার মতো।
যেনো বহুরঙা দোল খাচ্ছে পাপ।
আমরা পেড়ে আনছি ব্যাধি।
পেড়ে আনছি কয়েকটি মোলায়েম আর্তনাদ।
কে শোধন করে দেবে? কে?
কে দেবে রুগ্নতার গায়ে লাল জামা?
আমি নবিদের মতো কাঁদবো একরাত।
কবি সর্বদাই আশাবাদি হন। এক আল্লাহতে সমর্পিত কবি নয়ন আহমেদ তো আরো বেশি করে স্বপ্ন দেখান হতাশ মানুষকে। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়াই বিশ্বাসীদের মূল ভরসা। যেমনটি আল্লাহ বলেনÑ ‘আর তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, কেননা কাফির সম্প্রদায় ছাড়া কেউই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না।’ আজ যে বর্তমান আমাদেরকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখছে, আমরা যে ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত হচ্ছি সে ভবিষ্যত নিয়ে কবি আমাদেরকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তিনি বলছেন, এ হতাশার আগামীকাল থাকবে না, একটি সুন্দর আগামী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেÑ
সেই ঋণদানকারী আগামীকাল
মুচকি হেসে বাড়িয়ে দিলো হাত-
যে রকম হাত বাড়াতেন ইসা নবি,
যে রকম শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন নবি মুহম্মদ সা.,
যে রকম আমরা বন্ধুদের দিকে চোখে ফুলের পবিত্রতা ছড়িয়ে
বাড়িয়ে দেই দু-চারটে গভীর সু-প্রভাত।
তখন যুগপৎ দুলে ওঠে আগামীকাল।
মানুষ সত্যিকার মানুষ হয়ে ওঠে তার নৈতিক মানবিক সত্তার বিচ্ছুরণে। তাকে যে সকল প্রাণির চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করা হয়েছে তা সে কখনো ভুলে যায়। কখনো সে তার আচরণের কারণে হয়ে ওঠে পশুর মতো কিবা তারো চেয়ে অধম। যেমনটি আল্লাহ বলেন, ‘আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় রয়েছে, কিন্তু তারা তদ্দ¦ারা উপলব্ধি করে না; তাদের চক্ষু রয়েছে, কিন্তু তারা তদ্দ¦ারা দেখে না। তাদের কর্ণ রয়েছে, কিন্তু তদ্দ¦ারা তারা শোনে না। তারাই হলো পশুর ন্যায়, বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত। তারাই হলো গাফিল বা উদাসীন।’ তাহলে দেখা গেলো মানুষই কখনো কখনো তার আচরণের জন্য হয়ে ওঠে সবচেয়ে নিকৃষ্টতর প্রাণী। কবি সে ক্ষেত্রে বলেন, পৃথিবীতে মানুষই বেশি হানাহানিতে লিপ্ত। তারা প্রেম-ভালোবাসা ঔদার্য কিছুই রপ্ত করে না। তাইতো কবির কবিতার ভাষা হয়ে ওঠে এমন-
একদা, পাথরের পাশে আমি রাখলাম
দুইটি গোলাপ।
পাথর তার চোখ তুলে
আমার হৃদয় পাঠ করে প্রেমের মুরিদ হলো।
বললো- ‘হে আমার নবি, পড়াও কলমা তোমার।’
মানুষেরই বড় বেশি বক্রস্বভাব।
প্রেম বুঝবে না।
(চলবে)