পথিক মোস্তফা
প্রতিনিয়তই আমাদেরকে শয়তান ইবলিশ নানানভাবে ধোকায় ফেলতে ব্যস্ত। কু-প্রবৃত্তির প্ররোচনায় আমরা ধীরে-ধীরে হারিয়ে যেতে থাকি পাপের অতলে। আমাদের জীবন হারাতে বসে অন্ধকারের কালো রাজ্যে। কামনার আগুনে আমরা জ্বলতে থাকি, সে আস্তে আস্তে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে আমাদেরকে ধ্বংসের প্রাণে নিয়ে যায়। আমরা ভুলতে বসি আমাদের মনুষ্যত্ব, আমাদের মূল্যবোধ। তাইতো কবি বলেনÑ
আমি প্রত্যহ দোহন করি কালো পাপ।
দোজখের গাভীটি চায় কামনার কচি ঘাস।
আবদার বাড়ে তার খুকির লাল জামার মতোন।
বলি: রোদ খা।
আমি দোহন করবো আলো।
তবু হে আযাব,
তুমি আমার ভেতরে এতো চুল্লি জ্বালো!
দোজখে কে থাকে ভালো?
পার্থিব জগতের নানান ঔজ্জ্বল্য, চাকচিক্য আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। আমাদের পার্থিব শিক্ষা-দিক্ষা কতোই জ্ঞানের আয়োজন, কিন্তু কেবল তাতে কি জীবন আলোকিত হয়; অন্তরের অন্দরে পবিত্রতার আলো জ্বলে? জ্বলে না। সেজন্য দরকার মহান আল্লাহর প্রিয় রাসূলের সা. প্রদর্শিত পথে চলা। আর সেই পথে ও মতেই রয়েছে মানুষের মুক্তি আর সঠিক নৈতিক মানবিক মূল্যবোধ। কবির ভাষাÑ
আমাকে দেয়া হলো কিছু পার্থিব রোদ।
আমি এই পবিত্রতা ক্রিমের মতো মাখি।
তবু অন্তর যে লাবণ্য ধারণ করে না!
আমি কি কালো ও মিথ্যাকে মুছে দিতে জানি!
ও পয়গম্বর, রোদে ধৌত হবার কোশল শিখিয়ে দিন।
আমি হবোই আনন্দের তালবেএলেম।
আমি মুছবো শ্লেটের মতো কালো!
মানুষের মনের মধ্যে যে কামনার আগুন প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে তাকে নিজের মতো করে নাফসের অনুগত না-হয়ে আদর্শিক উপায়ে ব্যবহার করতে হয়। যেমন, মানুষ হারিকেনের চিমনির মধ্যে আটকে রেখে আগুনকে ব্যবহার করে; যাতে সে বাহিরে বেরিয়ে পড়ে সবকিছু জ্বালিয়ে না দেয়। কবি তার কবিতার বয়ানে বলেন
আমি, হারিকেনের চিমনির মতোন আবৃত করেছি বাসনা-আগুন।
পবিত্র হও।
বিকশিত করো।
আশা করি, রুটি বানাতে পারঙ্গম হবে।
উন্মুক্ত করো না।
দোজখ তৈরি হবে।
ক্ষীণ হবে বাঁচার কামনা।
.............................
বাসনাকে দোজখের লাকড়ি বানিও না।
কবির অন্যা কবিতাগ্রন্থেও এ বিশ্বাসের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। নব্বই দশকের কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে কবি নয়ন আহমেদের বিশ্বাস ও কবিতার মাধুর্য সম্পর্কে আরেক ঈমানদার কবি আল মাহমুদের মন্তব্যটি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেনÑ
‘নয়ন আহমেদ, সায়ীদ আবুবকর, খৈয়াম কাদেরের কবিতায় দৃশ্যের চালচিত্রে ফুটো দিয়ে একটি অদৃশ্য জগতের আভাস আমরা পাই। সেই অদৃশ্য জগৎ সম্বন্ধে যে প্রত্যয়বোধ এসব কবিরা উত্থাপন করতে চেয়েছেন তা তাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্যেরই দিক নির্দেশনা।’
অসাধারণ মেধাবি কবি নয়ন আহমেদের কবিতারা এগিয়ে চলে সহজ-স্বাভাবিক সারল্যের পথ ধরে। কিন্তু কী অসম্ভব সৌন্দর্যই না ছড়িয়ে যায়! তিনি ধর্মীয় অনুভূতিকে, মহান আল্লাহর প্রতি তীব্র বিশ্বাস আর আস্থা রেখেই নিজের কবিতার শরীর গঠন করেন। তিনি ইসলামী মূল্যবোধের একজন চিরন্তন ধারক-বাহক। তাঁর হৃদয়ের প্রতিটি কোটায় ছড়িয়ে আছে বিশ্বাসের আভা। তবে তিনি তাঁর কবিতার ভাষাকে উন্মুক্ত করে দিলেও বোধকে করেন একান্তই আপনার অনুগামী। তাইতো বেশিসংখ্যক পাঠকই তাঁর কবিতার বাহ্যিক স্বাদের আস্বাদ গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হন, কারণ তাঁর কবিতার অন্তরে-অন্দরে প্রবেশে কখনো কখনো ক্লান্ত হতে হয়। তবে বিশ্লেষণী কাব্যিক মনোভাব নিয়ে সে-সব আস্বাদনের চেষ্টা করলে দেখা যাবে, কবি নয়ন আহমেদের কাব্য মহান প্রভু আল্লাহর অপার সৌন্দর্য ও তাঁর সৃষ্টির অপরূপ লীলাভূমিতে অবাধ বিচরণ করছে। কবির কবিতা অপার দিগন্ত প্রসারি। তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন যুগ ও সময়কে ধারণ করেই; তবে তিনি কালোত্তীর্ণ হবেন এমনটাই আশা করছি আমরা। (সমাপ্ত)