ওমর বিশ্বাস
এদের একটাই সমস্যা এদের যন্ত্রযানটা আকারে অনেক বিশাল। অবশ্য প্রয়োজনেই এমন আকৃতির বানানো হয়েছে। এটাকে যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে সহজে নেওয়া যায় না। এদের অনেক দূরে গিয়ে অবতরণ করতে হয়। সব সময় লোকালয় থেকে দূরে থাকতে হবে। এতে সহজে পৃথিবীর মানুষের সাথে মিশতে কিছুটা বেগ পেতে হবে। তবু নিরাপত্তার স্বার্থে ও কাজের সুবিধার জন্য এরকম করা হয়েছে। নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হলে মানুষের খুব কাছাকাছি থাকা জরুরি। সে রকম ব্যবস্থাও তাদের করা আছে। যে কোনো সময় যে কোনোকিছু অল্প সময়ে করার ব্যবস্থা আছে।
তাদের যন্ত্রযানটা ক্ষুদ্র হওয়ার প্রশ্ন আসে না। কেননা ক্ষুদ্র হলে তাদের পরিকল্পনামাফিক কাজ করা সম্ভব হবে না। পৃথিবীতে তারা যখন আসছে তখন লটবহর নিয়ে আসতে হচ্ছে। একটার সাথে আরেকটা জড়িত। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্যও তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে জায়গা লাগে। কাজের জন্য এর ভিতরই ছোটবড় অনেক কিছু আছে। ড্রোনের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার ব্যবস্থা আছে। ভিতরে প্রচুর পরিমাণ টেকনিক্যাল ইকুইপমেন্ট আছে। প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যাবে এরকম সবকিছু এর ভিতর আছে।
তাদের কাজের কোনো সমস্যা হয় না। শুধু জনবলকে ফিল্ডে কাজ করানো সময় ঝামেলা বাধতে পারে পৃথিবীর মানুষের সাথে। সেটা নিয়ে তারা কিছুটা চিন্তিত। হাজার হলেও পৃথিবীর মানুষের সাথে তাদের তো পার্থক্য রয়েছেই।
উপগ্রহটার ভিতরে কিরকম তা আসলে কেউ জানে না। যারা এটাকে পাঠিয়েছে তারা বলা যায় অনেক উচ্চমানের বিজ্ঞানী। তারা খালি খালি পাঠায়নি Ñ এটা আসিফদের মতো ক্ষুদ্র মানুষদেরও বুঝতে অসুবিধা হয় না।
প্রথম অবতরণের পর ওইদিন ভোরের সূর্য ওঠার আগেই তারা চলে যায়। তাদের সূর্যের গতির সাথে তাল মেলানো আছে। সূর্যের আলোতে কাজ করতে হলে কি করতে হবে, অন্ধকারে কাজ করতে হলে কি করতে হবে সব ব্যবস্থাই করা আছে। ওইদিন চলে যাওয়ার পর তারা আরো দুয়েকবার এসেছিল গত পনের দিনে। এটাকে তারা নিয়মিত করতে চায়। সামনের দিনগুলোতে ঘনঘন আসতে হবে। পৃথিবী সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে। এখানকার আবহাওয়া জলবায়ুকে তারা হিসাবনিকাশ করেই এখানে এসেছে।
আসিফদের কাছে কখনো কখনো মনে হয়েছে এদের পৃথিবীর কোথাও থেকে পাঠানো হয়েছে। হতে পারে, পৃথিবীর কারোর কোনো উদ্দেশ্য আছে। মহাশূন্যে কতকিছুই না পাঠানো হচ্ছে। সেগুলোই ফেরত আসছে। পৃথিবীর কোনো দেশের পক্ষে বা কোনো শক্তিশালী গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো পাঠানো হচ্ছে। একেবারে অসম্ভব কিছু না। এটা তাদের কারোর কারোর বিশ্বাস।
তাদের বিষয়ে আসিফদের কোনো ধারণা না থাকায় প্রথম প্রথম তারা এটাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে চায়নি। কতকিছুই তো চোখের সামনে আসে আর যায়। সবকিছু নিয়ে কি সবাই মাথা ঘামায়। কিন্তু তাদের একটা ধারণা জন্মেছে যে, ওটা কিছু একটা হবে। কেউ না কেউ ওটাকে এখানে পাঠাচ্ছে। কোনো দেশের পক্ষে হয়তো গোয়েন্দাগিরি করার কাজে এটাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। যারাই পাঠাক তাদের উদ্দেশ্য মোটেই ভালো না। তা না হলে এভাবে গোপনে গোপনে এইখানে আসবে কেন? দুদিন পরপরই বা আসবে কেন? তারা অনেকেই দেখেছে। অথচ এ সম্পর্কে কেউ কিছু জানে। পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলগুলোতে কোনো খবর নাই। তাহলে কি কেউ এটাকে দেখে না?
আসিফরা জানে না এই উপগ্রহ পৃথিবীতে আসছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাডার ফাঁকি দিয়ে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো বিপদে পড়তে হয়নি। কেউ তাদের নিরাপত্তা ব্যূহভেদ করতে পারেনি।
এরা মানুষজনকে এড়িয়ে চলে। মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে হবে এই নির্দেশ দেওয়া আছে। এটা করা হয় তাদের কাজের সুবিধার জন্য। যদি কোনোভাবে ধরা পড়ে তাহলে তাদের পরিকল্পনা ভেসে যেতে পারে। প্রয়োজনে নিজেরাই মানুষের ভিতর মিশে গিয়ে কাজ করবে। সেই রকম প্রস্তুতিও তাদের আছে। তারা অনেক দূর পরিকল্পনা করে রেখেছে। তাদের পরিকল্পনায় আছে একসময় তারা ধরা পড়বে আর ধরা পড়লে কিভাবে কি করবে। তার আগে যতবেশি সম্ভব সবকিছু নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নিতে হবে। তাদের ঠিক করা আছে একবার ধরার পড়লে সেখান থেকে আবার কীভাবে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হবে। সেটা যতদিন লাগে লাগুক।
ওরা দেখাতে চায় পৃথিবীর মানুষকে ওরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কি না। তাছাড়া একটা বিশেষ উদ্দেশ্য তো তাদের আছেই। (চলবে)