জুবাইর আল হাদী

বাংলার আকাশে এক অনুপম আলেখ্য আঁকে শরৎকাল। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের প্রকৃতি যেন এই ঋতুর আগমনে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। এই ভূখণ্ডে স্রষ্টার কৃপায় যেন ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের অপার সম্ভার, যার প্রকৃষ্ট প্রকাশ ঘটে শরতে। কবিদের কল্পনায়, গীতিকারদের গানে, শিল্পীদের তুলিতে বারবার ফিরে এসেছে এই ঋতু, তার সৌম্য রূপ ও কোমল আবেগ নিয়ে। বাংলার ভোরে যখন শিশিরধোয়া কাশবন জেগে ওঠে, আর দূরের দিগন্তে মেঘের শামিয়ানায় ঢেকে যায় আকাশ, তখন মন বলে ওঠে—এ যেন রূপের মহোৎসব।

শরৎ তার সৌন্দর্য নিয়ে আসে নীলাভ আকাশে ভেসে থাকা তুলোর মতো মেঘে, স্নিগ্ধ রোদে ঝলমল করা ধানক্ষেতে, আর শিউলি ফুলের পাপড়ি ছাওয়া পথের ধারে। একটানা বৃষ্টিময় বর্ষার শেষে এই ঋতু যেন এক নিঃশব্দ আশ্বাস, যে বলে “আলো আসবে, ফসল আসবে, আনন্দ আসবে।” কবিতার মতো মায়াবী, গানের মতো মধুর, আর চিত্রের মতো নিবিড় এই ঋতু মন ছুঁয়ে যায় গভীরভাবে।

প্রকৃতি শরতের কাছে যেন নিজেকে তুলে দেয় নির্দ্বিধায়। নদী তার স্বচ্ছ জলে প্রতিফলন ঘটায় আকাশের রূপ। কাশফুলেরা বাতাসে দুলে দুলে ছড়িয়ে দেয় এক ধূসর শুভ্রতা, যেন পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে রাখে এক অব্যক্ত আবেগে। গ্রামের মাঠে, পুকুর পাড়ে, বাঁশঝাড়ের ছায়ায়, প্রকৃতির প্রতিটি পরতে অনুভব করা যায় শরতের নিঃশব্দ চলাচল। শিশিরভেজা সকালে সূর্যের কোমল আলোক রশ্মি গায়ে মেখে ধানের শীষে সোনালি স্বপ্ন জাগে। কৃষক সেই স্বপ্নের ঘ্রাণ মেখে যায় ক্ষেতের দিকে। তার পায়ের নিচে ঘাসে জমে থাকা শিশির বিন্দু একেকটি যেন রুপালি চুম্বন।

শরৎ শুধু চোখে দেখা নয়, শরৎ হৃদয়ে অনুভবের ঋতু। তার বিকেল রূপ নেয় এক কাব্যিক রূপে। রাতের শরৎ যেন রহস্যের আবরণে মোড়া। জ্যোৎস্না নামে ধীর পায়ে, চাঁদের আলো মেখে যায় নদী, মাঠ, বনানী। কুয়াশা ঘেরা আকাশে তারা যেন চোখের ভাষায় কথা বলে। কোনো পূর্ণিমা রাতে যখন চাঁদ তার রূপে বিছিয়ে দেয় আলো, তখন দিগন্ত জুড়ে এক অলৌকিক আবেশ জাগে। রাতের শেষে ভোর হয় শিশিরভেজা, কুয়াশার পাতায় গড়িয়ে পড়ে চাঁদের স্মৃতি। শিউলি ফুল পড়ে থাকে নিঃশব্দে। সুঘ্রাণে তখন ভরে ওঠে মন।