ওমর বিশ্বাস
পরদিন এমনিতেই তাদের যাওয়া হলো না। পরের দিনও না। একেকদিন দিন একেক জনের ঝামেলা। সবাইকে কবে একসাথে পাওয়া যাবে তার ঠিকঠিকানা নাই। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেল। এর মধ্যে ঘটলো একটা অবাক করা ঘটনা।
আসিফের আম্মা কথা বলতে বলতে হাতের মোবাইলটা একসময় আসিফের পড়ার টেবিলে রেখে যায়। তিনিও খেয়াল করেননি, আসিফও না। তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এরকম বৃষ্টি হলেও বাইরের সবকিছু পুরো ভিজে গেছে, গাছপালাও ভিজা। এর আগে একদফা জোরেশোরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আসিফের রুমের জানালায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টির পানি লেগে আছে।
আসিফের কালকের ক্লাসের জন্য অনেক পড়া বাকি। প্রায় সব ক্লাসেই স্যাররা পড়া দিয়েছেন। তার বিজ্ঞান মুখস্থ করতে হবে। সূত্রগুলো মুখস্থ না করলে হবে না। অংক বুঝে কোনোভাবে করে রেখেছে। এই রাতের নিরিবিলি সময়টা বিজ্ঞান মুখস্থ করার জন্য ভালো সময়। সে বিজ্ঞানের বই খুলে বসে আছে।
মোবাইল অপারেটররা নানান রকম অফার দেয়। প্যাকেজ থাকে। রিং দিয়ে মানুষকে কৃত্রিম গলায় জানায় নানান রকম প্যাকেজের এটা নিয়ে ওটা নিয়ে। এগুলো সবার কাছেই খুব বিরক্তিকর।
এরকম একটা রিং বেজে উঠলো রাতের বেলা। হঠাৎ এতো রাতে এরকম একটা রিং শুনে বিরক্ত হলো না, আসিফ চমকে উঠলো। সে তো জানে না এখানে মোবাইল রাখা আছে। এতো রাতে আবার কে ফোন দিলো? প্রথমে চমকে উঠলেও এখন সে বিরক্ত। সে মনে করতে পারে না এখানে মোবাইল আসলো কি করে?
আরে, এটা যে তার আম্মার হ্যান্ডসেট তার টেবিলের উপর রাখা। সে কলটা কাটে না, রিং বাজলেও ধরে না। সেটের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে। একটু পড়ায় যখন মন বসালো তখনই বাধা পড়ল। সে ওঠে না। আবার বইয়ের পাতা উল্টায়। ঠিক করে আর কোনো ফোন না আসলে তাইলে পড়া শেষ করে ফোনটা দিয়ে আসবে। তাই সে ফোনের থেকে মন সরিয়ে পড়ার দিকে দেয়।
সে পড়ছে। বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়ছে। একটা সাদা সাদা আলো তার চোখে লাগলো। সে বইয়ের পাতা থেকে চোখ তুলে তাকায়। প্রথমবার ধরতে পারেনি কিছু। আলোটা সাথে সাথে নিভে গেছে। আবার সব আগের মতো। আসিফ ভাবে আলোটা কোথা থেকে আসলো? মনটা আবার পড়ার দিকে দেয়। আলোর কথা ভুলে যায়। এভাবে কেটে যায় বেশ কিছু সময়। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার একটা সাদা আলোর ফোকাস হলো সেটার স্ক্রিনে।
এবার সে চোখ তুলে ভালো করে দেখতে থাকে কোথায় কি হচ্ছে। আলোর ঝলকানি হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? কিসের আলো বোঝার চেষ্টা করে।
সে যা দেখলো খুবই অবাক হলো তাতে। দেখলো তার আম্মার মোবাইলে ভাইব্রেশন হচ্ছে। আলোটা ওখান থেকেই আসছে। অথচ এবার ফোনে কোনো কল আসেনি।
চমকে উঠলো আসিফ! (চলবে)