ওমর বিশ্বাস
আসিফরা খুবই উদ্বিগ্ন। কোথা থেকে যেন কি সব হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছে তাদের উপর চড়াও হতে। তারা ধরে নিয়েছে এই এলিয়েনগুলো তাদের ক্ষতি করতে পারে। তা না হলে তারা আসবে কেন? কিন্তু তারা কোথা থেকে এসেছে সেটা বলা মুশকিল। জানার কোনো উপায়ও নাই। তারা মানুষের মতো কথা বলে। চলাফেরা করে। তারা যেখান-সেখান ঘোরাঘুরি করে Ñ এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাদের দেখে প্রথমে কেউ চিনতে পারে না। তারা তো অবিকল মানুষের মতো। কে তাদের বলবে তারা মানুষ না। খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করে দেখলে বোঝা যায় তারা মানুষরূপী, মানুষের মতো। তাদের সাথে মানুষের একটা অমিল আছে।
কিন্তু সাধারণ চোখে এসব কিছুই ধরা যায় না। বোঝাও যায় না।
অবশ্য আসিফরা যখন জানতে পারে এরা এলিয়েন প্রকৃতির তখন তারা স্বস্তি পায়। তারা জানে এই পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও মানুষ নামের প্রাণের অস্তিত্ব নাই। তাহলে এরা কোথা থেকে আসবে? তারা ওদের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। তারা জানে তাদের যেই তৈরি করুক না কেন হুবহু মানুষের মতো বানাতে পারবে না। একজন ছাড়া অন্য কারোর পক্ষে মানুষ বানানো সম্ভব না। আসিফরা মানুষরূপী এই বিশেষ প্রকৃতির প্রাণীগুলোকে নিয়ে প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে সময় দিচ্ছে যাতে তারা একটা সঠিক কিছু বের করতে পারে।
তবে তাদের সন্দেহ, তারা কি পারবে?
এরকম হবে কেন। নাকি তারা ভুল দেখছে। যদি দেখেও থাকে তাহলে তো একজনের ভুল হতে পারে। সবারই কি ভুল হওয়ার কথা। সবাই তো লালবাতি দেখেছে। আশ্চর্য! একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে আসার পর সেটাকে আর দেখা যায় না। কেউ সেটা এখন পর্যন্ত দেখেনি। না আসিফ, না তাজিন, না সিয়াম, না কেউ। সবারই কি একই ভুল হবে। কিভাবে যে সেটা অদৃশ্য হয়ে যায় চোখের পলকে।
ওটা কিছু একটা তো অবশ্যই। আসিফরা যদিও তার কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায় না। ওটা কি? ওটা কোথা থেকে আসে? হঠাৎ উধাও হয়ে যায় কেন? এরকম প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে বারবার।
তাদের এখানে কি কাজ? কেন এখানে আসবে!
এরকম প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
আসিফরা কোনো উপায় খুঁজে পায় না। আসলে কি সেটা? তাদের প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে ওটা কি জিনিস? তারপর না ওটা নিয়ে ভাবতে পারবে। এখন তো সবকিছু সম্পর্কেই ইন্টারনেট ঘেটে ধারণা নেওয়া যায়। তাই তারা একবার ঠিক করেছিল উপগ্রহটা যখন নিচের দিকে নেমে আসতে থাকবে কেউ চোখের পলক ফেলবে না। কিন্তু যখনই পলক পড়ে তখন থেকেই সেটা আর দেখা যায় না।
বড় অবাক লাগে! এর কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।
এলিয়েনদের নিয়ে আসিফের দিন কাটে অস্থিরভাবে। মাথা থেকে সরাতে চাইলেও সরাতে পারছে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আসিফ চেষ্টা করেছে মাথা থেকে ওটাকে সরিয়ে দেবে। কিন্তু পারেনি। ঘুরেফিরে তার মাথায় ওই একই চিন্তা। এই নিয়ে সে একাধিক দিন ওটা দেখেছে। তার বন্ধুরাও দেখেছে। তাহলে ওটা নিশ্চয় কিছু। সে পড়াশুনা মন দিতে চায়। পড়তে থাকে। খানিক পর মাথার ভিতর লাল একটা কিছু এমনভাবে নাড়া দেয় মন তখন পড়ার টেবিল থেকে চলে যায় অন্য কোথাও। জোর করে আবার পড়ায় মন বসাতে হয়।
আজ আপনাআপনিই আসিফের চোখ চলে যায় আকাশের দিকে। সে দেখতে পায় একটা লাল আলোর নড়াচড়া। গত কয়েকদিন চিন্তা করলেও মাঝখানে ওটার দেখা সে পায়নি। আজকে আবার দেখা হলো। এখন অবস্থা এমন যে, তার বন্ধুরা প্রতিদিন এই সময়টা ওর মতো আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। রাতে কে কে দেখেছে তা নিয়ে পরদিন আলোচনা হবে। এরমধ্যে একদিন আসিফ মিস করে, সে বাহিরে গিয়েছিল বাসার সবার সাথে দাওয়াত খেতে। এসেই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে। তার মনে ছিল না ওটা দেখার জন্য এখন সবাই অপেক্ষা করছে। তারও দেখার কথা। তাদের প্রায়ই অপেক্ষা করতে হয় বস্তুটা দেখা জন্য।
এটার গতিবিধি বা অবস্থা জেনে তারাও তাদের গতিবিধি ঠিক করবে। (চলবে)