গাজীপুরের সুস্থ ধারার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্পন্দন’-এর মিলন উৎসব ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রাণবন্ত পরিবেশে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার গ্রেটওয়াল সিটির হাজী টাওয়ারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি এবং ঐতিহ্য পুনঃস্মরণে মুখরিত হয় পুরো মিলনমেলা।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যতিক্রম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক অর্থ সম্পাদক, নাট্যাভিনেতা ও স্পন্দনের উপদেষ্টা মোঃ সামছুল আলম শিবলী এবং বিশিষ্ট সংগঠক ও সাংবাদিক মোঃ হুমায়ুন কবির। তাঁরা স্পন্দনের গৌরবময় অতীত ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা তুলে ধরেন।

সাবেক পরিচালক বোরহান উদ্দিন অরণ্য, আজিজুল ইসলাম ও মুফতি এনামুল হক সিরাজি তাদের স্মৃতিচারণে বলেন, স্পন্দন শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নাম, যা গাজীপুরে সুস্থ বিনোদন ও সাহিত্যচর্চার পথ তৈরি করেছে।

বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল-আমিন হাসান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে শিল্পীদের মাঝে উদ্দীপনা সঞ্চার করেন। সভাপতিত্ব করেন বর্তমান পরিচালক সোবাইল চৌধুরী এবং পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সহকারী পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ।

প্রায় ৩৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ‘স্পন্দন’ দীর্ঘদিন ধরেই গাজীপুরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একটি উজ্জ্বল নাম হিসেবে পরিচিত। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই সংগঠনটির প্রধান লক্ষ্য।

বক্তারা বলেন, “আজকের এই মিলন উৎসব শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি সতর্ক বার্তা। বিশ্বায়নের নামে চলমান সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক, জীবনধারা ও চিন্তাভাবনা বিপন্ন হচ্ছে। বিদেশি টিভি চ্যানেল, সিরিয়াল ও সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্টের প্রভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এক ধরনের অন্ধ অনুকরণে ঝুঁকে পড়ছে, যা জাতীয় পরিচয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ।”

তাঁরা আরও বলেন, “বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামীণ ঐতিহ্য, লোকগান, নাটক, চলচ্চিত্র—এসবই আমাদের আত্মপরিচয়ের ভিত্তি। তাই এসবের চর্চা বাড়িয়ে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই জাতীয় সংস্কৃতির পক্ষে সোচ্চার থাকার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। শেষাংশে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেখানে সংগীত, কবিতা, নাট্যাংশ ও আবৃত্তির মাধ্যমে শিল্পীরা তাদের প্রতিভা মেলে ধরেন।