ওমর বিশ্বাস

আসিফের মনে হচ্ছে তার মনের ভিতর একটা ভয়ের জানালা খুলে গেছে। সে জানালা দিয়ে ভয় তার ভিতর প্রবেশ করছে। সে বুঝতে পারছে না কি ঘটছে। একই ঘটনা তার আম্মার মোবাইলে আবার হলো। সে আগে থেকেই সেটা তার টেবিলে এনে রেখেছিল।

আজো বৃষ্টি হচ্ছে। সারাদিন হয়েছে। এতক্ষণ বৃষ্টি ছিল গুঁড়িগুঁড়ি। বাইরে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। বলা যায় ভালোই বৃষ্টি।

বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নারকেল গাছটার ডগাগুলো এলোমেলো দুলছে। সেগুলো অন্য গাছের পাতার সাথেও গায়ে গায়ে লাগছে। গাছের পাতায় পাতায় বাড়ি খাওয়ায় একধরনের শব্দ হচ্ছে।

এর মধ্যে দূর থেকে একটা বিদ্যুতের আলো ঝলক দিয়ে উঠলো। বজ্রপাতের শব্দ হয়, এর শব্দ নাই। আলোর চমক বজ্রপাতের মতো হলেও বিষয়টা উল্টা। শব্দ নাই! আলোটা উপর থেকে না এসে নিচ থেকে উপরের দিকে উঠে গেল!

বজ্রপাত হলে এরকম হওয়ার কথা না।

আসিফের বিস্ময়ের পর বিস্ময় লাগে!

আসিফ পুরোপুরি গা ঝাড়া দিয়ে উঠল। তার বিস্ময় ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে আর মোবাইলটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। নারকেল গাছের কতগুলো পাতা লোহার সাথে লেপ্টে আছে। ওদিকে কখন যেন টেবিলে থাকা সেই স্কুল থেকে কুড়িয়ে আনা তারের একপাশ গাছের পাতার সাথে লেগে আছে খেয়াল নাই।

আসিফ মোবাইল সেটটা হাতে তুলে নেয়।

ওটা তখনো কাঁপছে আর আলো জ্বলে আছে। যতক্ষণ কাঁপে আলো জ্বলতে থাকে। মোবাইলে কল আসার মতো। আসিফ সেটটা নাড়াচাড়া করলো কিছুক্ষণ। মনের ভিতর একধরনের ভয় ধরে আছে। সে নিজে এখন এলোমেলো। যা করছে সবই অস্থির হয়ে করছে। বুঝেশুনে বা ঠান্ডা মাথায় করছে ব্যাপারটা সে রকম না।

আসিফ এবার সেটের বোতামগুলো টিপছে। একেক চাপে একবার করে টুট টুট আওয়াজ হয়। এবার চাপ দিল ইয়েস বাটমে। কারোর রিং বাজলে এই বাটমে চাপ দিয়ে কথা বলতে হয়। সবাই জানে। সেও জানে তবু এখন তার কাছে সেটাই কেমন যেন মনে হয়। কারোর নাম্বার ভাসছে না অথচ মোবাইলটা অদ্ভুতভাবে সক্রিয়! সে কি নতুন কিছুর খোঁজ পেয়েছে! এরকম একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে চাপ দিলো ইয়েস বাটমে।

কি আশ্চার্য! একটা শব্দ টু করে উঠলো।

আসিফ ঝুঁকে পড়ে সেটটার ওপর। বলা যায় সেটের ভিতর তাকে টেনে নিয়ে গেছে শব্দটা। সেটের কথা বলার বোতাম অন করা। অদ্ভুত কিছু দেখার মতো সে দেখছে। সেটটা সে কানে নিলো। অনেক গভীর মনোযোগ দিয়ে সেখান থেকে একটা কিছু সোনার চেষ্টা করছে। একবার কিছু একটা আসছে একবার আসছে না এরকম হচ্ছে। শোনার জন্য জোরে কানের সাথে চেপে ধরে সেটটা। শোনা যাচ্ছে না কিন্তু মনে হচ্ছে চেষ্টা করলে শোনা যাবে। এ সময় হালকা বিরক্তও হয়। তবু তাকে শুনতে হবে।

শব্দটা কিছুটা এখন শোনা যাচ্ছে একটু জোরে জোরে। এমনভাবে হচ্ছে মনে হলো সেটের ভিতর কেউ যেন নড়াচড়া করছে। তার কাছে এরকমই লাগছে। সে আরো জোরে চেপে ধরে কানের সাথে। মুহূর্তে একটা বিস্ময়সূচক শব্দ অস্পষ্টভাবে তার মুখ থেকে বের হয়। সে কিছু একটা শুনতে পাচ্ছে!

এবার তার কাছে মনে হলো একটা মানুষের গলা সে শুনতে পাচ্ছে।

সে আরো জোরে চেপে ধরে সেটটা।

একটা দমকা বাতাসে গাছগুলো আবার নড়াচড়া শুরু করেছে। এখন মোবাইল সেট থেমে গেছে। স্থির হয়ে আছে আগের মতো। কোনো সাড়া শব্দ নাই তাতে। (চলবে)