পথিক মোস্তফা
০৫.
আর যাদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে, যে আল্লাহে ভরসা রাখতে পারে না, সে কখনো সুখি হতে পারে না। তার মনের ব্যাধি কখনো ভালো হয় না। তাইতো কবি বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী বা অল্পবিশ্বাসীদের আনন্দ ও বেদনা নিয়ে তাঁর কবিতায় বলেন-
নূপুর বাজিয়ে আসে আমার আনন্দ;
নেচে নেচে আসে।
দেখবে, আমার আছে বর্ণময় যৌথ আলো!
গাছের পাতার মতো দৃষ্টিগ্রাহ্য রাত নামিয়ে আনতে পারি।
গয়নার মতো উজ্জ্বল বিস্ময় দ্যাখো।
প্রশংসা করতে পারো।
জেনে রাখো-
অল্পবিশ্বাসীদের অসুখ আর ভালো হবে না!
তবু তাদের জন্য প্রার্থনা করো।
গুজরাটের মুসলমানদের উপর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদিদের অত্যাচার সকল মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। সেখানে নারীদেরকে করা হয়েছে ধর্ষণ আর শিশুদেরকেও করা হয়েছে নির্মম হত্যা। কিন্তু সম্পূর্ণ নির্বাক-নির্বিকার ভারতীয় হিন্দু নেতারা ও সরকার। এ যেনো ওদের কোনো পুণ্য কর্মের মতোই স্বাভাবিক কোনো কাজ। ভারতের সাবেক এক মুসলিম সেনা কর্মকর্তা সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জমিরউদ্দিন শাহ এ হামলা ঠেকাতে তৎকালীন সরকারের সমালোচনা করেন। এ সম্পর্কে তিনি একটি বই লেখেন। এ ভয়াবহতম ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০০২সালে।
‘সেনাবাহিনীর সাবেক এ উপপ্রধান গুজরাট দাঙ্গার মোকাবিলায় মোতায়েন করা সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি তার সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে দাঙ্গা ঠেকানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। ‘দ্য সরকারি মুসলমান’ নামে তার ওই বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে ভারতের সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দাঙ্গার সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই ভয়াবহ দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের এখনকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’
এ সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সে সময় কমপক্ষে দুইসহস্র মুসলিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। এ হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে কবির ক্ষোভের উচ্চারণ-
পৃথিবীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করিয়ে দেই
সুন্দর একটি লালা ডিনামাইট।
ঘৃণা হয়ে ফুটে ওঠে আগুনের কনিষ্ঠ বাচ্চারা।
বোল, হরি বোল।
বোল, হরি বোল।
কে বলেছে এর নাম উৎসব নয়?
এবার, আরামে ঘুমাও শিশুরা।
পৃথিবীর গর্ভাশয়ে সবেগে ছড়িয়ে দেই
আঁধারের উর্বর বীজ।
কী সুন্দর কুৎসিত হয়ে আসে হত্যা ও বলাৎকার!
বোল, হরি বোল।
বোল, হরি বোল।
গার্মেন্টস-এর কাটিং মাস্টারের মতো টুকরো টুকরো করি
মানবতা।
চুপ, সোনামনিরা! কাঁদে না, কাঁদে না!
এবার, শান্তিতে ঘুমাও শিশুরা!
কবির উচ্চারণগুলো ক্ষোভ, ঘৃণা আর ব্যঙ্গাত্মক। ওরা মুসলিমদেরকে হত্যা করে উৎসবের আমেজে।
নয়ন আহমেদ নৈরাশ্যবাদীদের দলে নন; তিনি হতাশার আঁধারে তলিয়ে যেতে চান না। কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেন- ‘উহারা প্রচার করুক হিংসা-বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;/ আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ। /উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,/ আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।’ কবি নয়ন আহমেদের কবিতার ভাষাও তেমন ইসলামী মূল্যবোধের মোড়কে মোড়া
কেউ কেউ ডুবে থাকবে
বাতাসের সমুদ্রে তৃষ্ণার্ত জীবনের মতো।
কেউ কেউ কাঁথার মতো
শেলাই করবে অন্ধকার।
আলো ফুটবে না
গাছের ডালে ফুটে থাকা ফুলের মতোন।
তুমি গাইবে-
দুঃখসব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে দুঃখগুলি সকলি ফুটিল।
আমি তখন নবিদের মতো রৌদ্র মেলে দিতে
আসবো।
কবির আরেকটি অসাধারণ রূপক কবিতায় কবি আমাদের সর্বদা বিপদাপন্ন হৃদয়ের কথা বলেন। মানুষের হৃদয় সব সময় নেকড়ের থাবার মধ্যে বিচরণ করে। এ নেকড়ে হচ্ছে আমাদের নফস বা প্রবৃত্তি। প্রতিনিয়তই আমরা নফসের ধোকায় পড়ে যাই। (চলবে)