নাটোরে জাতির শেকড় সন্ধানী ঔপন্যাসিক শফীউদ্দীন সরদারের ৯০তম জন্মদিন পালন কা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করে কথাসাহিত্যিক শফীউদ্দীন সরদার ফাউন্ডেশন।

কথাসাহিত্যিক শফীউদ্দীন সরদার ফাউন্ডেশনের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল ওহাবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক উপমন্ত্রী এডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, পুলিশের ডিআইজি (এটিইউ) এ জেড এম নাফিউল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম কনক, ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, শফীউদ্দীন সরদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম ও মেয়ে শামীমা নার্গিস, জেলা বিএনপির আহবায়ক রহিম নেওয়াজ, জেলা জামায়াতের আমীর ড. মীর নুরুল ইসলাম, নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট রুহুল আমিন তালুকদার টগর, নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সুধি ও গুনিজনেরা।

সভায় বক্তরা বলেন, শফীউদ্দীন সরদার বাংলার নব জাগরনের মুসলমানদের উৎস অনুসন্ধান করে গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে তাঁর ১৬টি উপন্যাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তাই তাঁকে জাতির শেকড় সন্ধানী ঔপন্যাসিক বলা হয়। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫৪টি। নন্দিত কথাসাহিত্যিক ছাড়াও তিনি ছিলেন রাণীভবানী সরকারি কলেজ, বানেশ্বর সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষসহ তিনি ছিলেন সফল শিক্ষাবিদ এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট। বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে সম্মাননা ও পদক প্রদান করলেও রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। শফীউদ্দীন সরদারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ জানান বক্তারা।

বাংলার ইতিহাসের অন্যতম নায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বঙ্গবিজয় থেকে ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলনসহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ের ইতিহাস তিনি সুনিপুন লেখনির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। সঠিক তথ্য ও ইতিহাস নির্ভর ১৬টি উপন্যাস হচ্ছে-বখতিয়ারের তলোয়ার, গৌড় থেকে সোনার গাঁ, যায় বেলা অবেলায়, বিদ্রোহী জাতক, বারপাইকার দূর্গ, রাজবিহঙ্গ, শেষপ্রহরী, প্রেম ও পূর্ণিমা, বিপন্ন প্রহর, সূর্যাস্ত, পথ হারা পাখি, বৈরী বসতি, অন্তরে প্রান্তরে, দাবানল, ঠিকানা এবং অবৈধ অরণ্য।

দেশ সেরা কবি আল্ মাহমুদের ভাষায় ‘শফীউদ্দীন সরদার বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। যিনি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম বীরত্বগাঁথার মহান উপস্থাপক। তিনি আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কথা শিল্পী শফীউদ্দীন সরদার এক সময় চলনবিল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকগাঁথা সংগ্রহে ব্যাপক কাজ করেছিলেন। সেসময় তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন মাদারের গান, যোগীগান, পদ্মপূরাণ, ভাষাণ গান, নৌকা বাইচের গান, বিয়ের গান ইত্যাদি। এসব লোকগীতিকে আশ্রয় করেই তিনি রচনা করেছিলেন অন্যতম উপন্যাস চলনবিলের পদাবলী।

তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য রূপকথাও লিখেছেন। তাঁর অন্যতম রূপকথার নাম সুলতানার দেহরক্ষী। শফীউদ্দীন সরদারের লেখক সত্তার সবচাইতে শক্তিশালী অবস্থান দেখা যায় রম্য রচনায়। রামছাগলের আব্বাজান এবং চার চান্দের কেচ্ছা নামে তাঁর দুটি রম্যরচনা রয়েছে।

শফীউদ্দীন সরদার তৎকালীন রাজশাহী বেতারের নাটক বিভাগের পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতা ছিলেন। তাঁর শতাধিক নাটক রাজশাহী বেতারে প্রচারিত হয়। এমনকি কি তিনি ক্ষেতে খামারে নামের বিপুল জনপ্রিয় একটি সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানও পরিচালনা করতেন।