সাহিত্য ও সংস্কৃতি
যেভাবে যাত্রা শুরু করল অভ্র
২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ অভ্র কি-বোর্ড প্রথম উন্মুক্ত করা হয়।
অভ্র একটি ফ্রি সফটওয়ার। অর্থাৎ এটাকে বিনামূল্যে ইচ্ছেমত ব্যবহার ও বিতরণ করা যায়। ব্যবহারকারীরা বলছেন, এই কি-বোর্ডে কাজ করা এতই সহজ যে বাচ্চারাও ঘণ্টাখানেক মোবাইলে চেষ্টা করলে এটা শিখতে পারে।
ফোনেটিক এই কি-বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মেহদী হাসান খান একজন চিকিৎসক ও প্রোগ্রামার।
যখন এই সফটওয়ারটি প্রতিষ্ঠা হয় তখন তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। বাকি সঙ্গীরাও ছাত্র ছিলেন।
বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করেন মেহদী হাসান খান । পুরস্কার প্রাপ্তির অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি বাংলাদেশে আসবেন।
দলগতভাবে একুশে পদক প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভ্র কি-বোর্ডের পেজে অভ্রের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে লিখেছেন মি. খান।
তিনি লিখেছেন, "২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম, তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনতো না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনো নতুন, হাজারটা সমস্যা।"
ধীরে ধীরে এই অনলাইন ফোরামে মানুষ সমস্যা নিয়ে আসতে শুরু করলে তা সমাধান করার চেষ্টা করেন বলে জানান মি. খান।
তিনি লিখেছেন, "অথবা 'বাগ' (সফটওয়্যার কোডিংয়ের একটা ত্রুটি) থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দেই। কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চিনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সাথে যোগ দেয়া শুরু করলো। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে এদের সাথে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা।"
সম্মিলিত এই কর্মযজ্ঞের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, "কোনো কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নাই তাদের। ফোরাম থেকে শুরু হয় বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সব কিছু একসাথে করলাম আমরা।"
তবে বিভিন্ন সময়ে ফোরামে অবদান রাখা অনেকে আবার নানা কারণে চলে গেলেও হাতে গোনা কয়েকজন থেকে যান বলে লেখেন তিনি।
"কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের উপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসাথে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারে নাই," লিখেছেন মি. খান।
একুশে পদক প্রাপ্তির বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে মেহদী হাসান খান আরও জানিয়েছেন, দলের কাজের কৃতিত্ব যাতে একক ব্যক্তি না পায়, সে বিষয়ে সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছেন।
পরে দলগতভাবে তার সহকর্মীদেরসহ এ পদক পাবেন বলে উল্লেখ করেছেন মেহদী হাসান খান ।
অভ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা মেহদী হাসান খান টিম-ওয়ার্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন ফেসবুক পোস্টে।
তিনি লিখেছেন, "পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সাথে আমাদের টিম-ওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক। একা একা তো বেশিদূর যাওয়া যায় না।"
বাংলা ফন্ট ইউনি বিজয় ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ও ভিজ্যুয়াল বেসিকের ওপর প্রথম লেখেন মেহদী হাসান খান।
পরে অভ্র কি-বোর্ড ব্যবহারকারীদের সুবিধায় ডটনেট ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়াই তা লেখেন।
অভ্র সম্পূর্ণভাবে ইউনিকোড উপযোগী। এই সফটওয়ারটি ২০০৩ সালের ১৪ই জুন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম থেকে স্বীকৃতি পায়।
২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ অভ্র কি-বোর্ড প্রথম উন্মুক্ত করা হয়।
পরে ওই বছরই সেপ্টেম্বরে নিজের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাব থেকে অভ্র সফটওয়ার উন্মুক্ত করেন মি. খান।
অভ্রের প্রতিষ্ঠাতাদের আরেকজন তানবীন ইসলাম সিয়াম জানান, এই সফটওয়ার ডায়নামিক টাইপের হওয়াতে যা লেখা হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই অ্যান্সারটা হয়। এটাকে ফোনেটিক বলে।
বিবিসি বাংলাকে মি. সিয়াম বলেন, "মানুষের আসলে নতুন করে লে আউট শেখার প্রয়োজন হচ্ছে না। যে ইংরেজি বা রোমান হরফে লিখতে অভ্যস্ত ওই লে আউট ব্যবহার করে যদি বাংলা লেখা যায়, তবে নতুন লে আউটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এ কারণে মানুষ দ্রুত এটা আয়ত্ত করে ফেলে।"