ওমর বিশ্বাস

এই নিয়ে একাধিক বার উপগ্রহটি এখানে এসেছে। কিন্তু কোনোবারই অবতরণ করেনি। মানে ভূ-পৃষ্ঠের মাটি স্পর্শ করেনি। নিজেদের অভিযান শুরু করার জন্য তাদের অন্যরকম প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। সেগুলো নিয়েছে। এর আগে কখনো আসেনি। তারা কয়েক দফা পৃথিবীতে এসে দূর থেকে ফিরে গেছে। সেগুলো ছিল পৃথিবীতে তাদের অবতরণের জন্য প্রস্তুতি পর্ব। নিজেদের জায়গা থেকে ধাপে ধাপে নিচের দিকে একেক দিন একটু একটু করে নেমে আসতো। সর্বোচ্চ নিচে নেমেছিল সপ্তাহখানেক আগে। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বত্রিশ হাজার ফুট উপরে ছিল সেদিন। এ পর্যন্ত যতবার মহড়া দিয়েছে টার্গেট অনুযায়ী সফল হয়েছে। এবারই তারা প্রথমবারের মতো তাদের হিসাবনিকাশ অনুযায়ী পৃথিবীতে নেমে এসেছে অভিযান শুরু করার জন্য।

এর আগে যতবার এসেছিল পৃথিবীর বিভিন্ন রকম ছবি, তথ্য তারা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তাদের পরিকল্পনা সফল করতে হলে অনেক কিছু জানা প্রয়োজন পৃথিবী ও তার মানুষ সম্পর্কে। দূর নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাহায্যে তারা এসব করছে। কাজে লাগাবে পৃথিবীর নানা তথ্য-উপাত্ত। তাদের নিজস্ব একটা পরিকল্পনা আছে। সেভাবেই তারা কাজ করছে। তারা এর জন্য একটা টার্গেট পয়েন্ট ঠিক করে নিয়েছে কোথায় তারা কাজ করবে। নিরাপদ আর নিশ্চিন্তে করতে পারবে।

যারা উপগ্রহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো রেকর্ড নাই যে পৃথিবীবাসী তাদের গতিবিধি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত তারা ছাড়া আর কেউ এই বিষয়টি সম্পর্কে জানে না। তাদের একটা বিশেষ লক্ষ্য আছে, সেটা একেবারেই তাদের। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে অন্যদের কাছ থেকে বরং তারা এখনো নিরাপদ। তাদের সম্পর্কে কোনো মানুষের কোনো ধারণাই নাই। এখনো কেউ সন্দেহ করেনি তাদের। তাদের অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারে না পৃথিবীবাসী।

এজন্য তারা খুব পরিকল্পিতভাবে কাজ করে ধাপে ধাপে এগুতে চায়। তাদের কাজের ধাপগুলো ঠিক করা আছে। প্রথমে একটা নিরাপদ বলয় তৈরি করা তাদের সবচেয়ে প্রথম ও প্রধান কাজ। এক্ষেত্রে যে কোনোপ্রকার ঝুঁকিমুক্ত থাকতে হবে। এজন্য খুবই শক্তিশালী আর ঝুঁকিমুক্ত একটা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে। তাদের হিসাবে আছে পৃথিবীর মানুষ জানতে পারলে ঝামেলা হতে পারে। কিন্তু অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পর মূল কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। তাদের ধারণা কেউ তাদের সম্পর্কে না এতো তাড়াতাড়ি জানতে পারবে, না তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করতে পারবে। এমনকি খুব সহজেই মানুষ তাদের শক্তিশালী নিরাপত্তাবলয় ভেদ করতে পারবে না। এই নিরাপত্তাবলয় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করা। তারা জানে, পৃথিবীতে এরকম কোনো প্রযুক্তি নেই।

রাতের অন্ধকারে এক নজর দেখলে এটাকে দূর থেকে একটা লালবাত্তি ছাড়া অন্য কিছু বোঝার কোনো উপায় নেই। আকৃতিতে এটা অনেকটা চাকতির মতো। তবে উচ্চতায় মোটামুটি ছয়তলা বাড়ির সমান। এর থেকে বেশি হলে পৃথিবীর অনেক জায়গায় অবতরণ করা যেত না। নিজেদের প্রয়োজনে তাদের পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবতরণ করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন-জঙ্গল কিংবা ঘন গাছপালায় ঘেরা এলাকা বেছে নিতে হবে। এজন্য উচ্চতা বেশি হলে অনেক সময় দূর থেকে বোঝা যেতে পারে। এখন যেখানে আছে সেখানকার গাছের উচ্চতা উপগ্রহের উচ্চতার কাছাকাছি বলে দূর থেকে বোঝার কোনো উপায় নাই। এর ছাদের উপরে গাঢ় সবুজ রং করা যাতে গাছের সবুজের সাথে মিশে থাকলে কারোর চোখে না পড়ে। তবে উপগ্রহটা প্রয়োজনে বিশেষ বিশেষ রং ধারণ করতে সক্ষম।

উপগ্রহের আকার মোটামুটি একটা ছোটখাট ফুটবল মাঠের সমান।

উপগ্রহ অবতরণ করার সময় বাতাসের বিশাল এক বলয় তৈরি করে। এটার উপরের দিকে একটা হেলিকপ্টারের মতো পাখা আছে। পাখাগুলো লম্বায় উপগ্রহের বৃত্তসীমার মধ্যে রাখা হয়েছে। খুব জোরে ঘুরুক আর আস্তে ঘুরুক নিচ থেকে কেউ সেই পাখা দেখতে পায় না। হেলিকপ্টারের মতো বিকট কোনো শব্দ এতে হয় না। ফলে সাড়াশব্দহীনভাবে এরা আসা-যাওয়া করতে পারে। নিজেদের নিরাপদ কাজের জন্য এদের এই নিঃশব্দ পদচারণা অনেক।

(চলবে)