শাদমান শাহিদ

যে কজন কবির কবিতায় কবি আল মাহমুদ উত্তরসূরি হিসেবে দৃঢ় আস্থা রাখতেন, তাদের অন্যতম ছিলেন কবি মহিবুর রহিম। তিনি গত ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখ রাত ১১টা ৪০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। পারিবারিকভাবে তিনি তিন পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন।

তিনি ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ, নিকলী উপজেলার প্রত্যন্ত ছাতিরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আমজাদ হোসেন ছিলেন সমাজসচেতন রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সংগঠক। মাতা মরহুমা কমলা খাতুন।

মূলত বই পড়া আন্দোলনের মাধ্যমে তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। ১৯৮২ সালে নিজ গ্রামে তিনি বই পড়া আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে একটি পাঠাগার গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে হান্নান গ্রন্থ সুহৃদ সমিতি গঠন করেন ও দীর্ঘদিন এ আন্দোলন চালিয়ে যান। এ সময়ে রেডিও বাংলাদেশে প্রচারিত ও ড. রাজিব হুমায়ুন উপস্থাপিত ‘কথাকলি’ অনুষ্ঠানে মহিবুর রহিমের কবিতা পঠিত হয়।

তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ সময় থেকে রচিত হয় তার ‘অতিরিক্ত চোখ’, ‘হে অন্ধ তামস’, ‘অনাবাদি কবিতা’, ‘পলি মাটির অন্তর’, ‘দু:খগুলো অনাদির বীজপত্র’, মিলেনিয়াম শব্দজট’, ‘সবুজ শ্যামল মন’, ‘শিমুল রোদে রঙিন দিন’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ।

মহিবুর রহিম কুমিল্লা অঞ্চলের লোকসঙ্গীত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকসাহিত্য, ভাটি বাংলার লোকসাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা করছেন। বাংলা একাডেমির ‘লোকজসংস্কৃতির বিকাশ কর্মসূচির’ আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকসাহিত্য’ বিষয়ে কাজ করেছেন।

লোকসাহিত্য গবেষণার জন্যে মহিবুর রহিম ‘প্রজ্ঞা’ শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি পদক ও স্মৃতি’৫২ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে ‘রকি সাহিত্য পদক ২০১১’, ‘মেঠোপথ সাহিত্য পদক-২০১৩’, ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহিত্য পদক-২০১৪’ ‘এএমটিভি সম্মাননা ২০২২’, ‘সিএনসি পদক ২০২৩, বিজয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পদক ও সম্মাননা ২০২৪ প্রভৃতি লাভ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি আরো অনেক পদক অর্জন করেছেন।

পেশাগত জীবনে মহিবুর রহিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এমন সক্রীয় এবং প্রথিতযশা কবির আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। মহান আল্লাহর দরবার তাঁর মাগফেরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সমবেদনা জানাচ্ছি।