দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক আলেম। মামলা-হামলা, কারাগার, রিমান্ড ও নানা হয়রানির শিকার হওয়া এসব আলেমদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক রকীবুল হকের লেখা নতুন গ্রন্থ আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন। ফ্যাসিস্ট ও জুলাই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) যৌথ সমর্থনের সরকারের একটানা সাড়ে ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভিন্নমতের মানুষের পাশাপাশি চরম জুলুম নির্যাতনের শিকার হন ব্যাপক সংখ্যক আলেম-ওলামা এবং মাদ্রাসার ছাত্র। নির্যাতিত হন তাদের পরিবারের সদস্যরাও। রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের পাশাপাশি বছরের পর বছর কারাগারে আবদ্ধ রাখা হয় বহু আলেমকে। অনেক আলেম ও মাদ্রাসার ছাত্র গুম ও খুন এবং ক্রসফায়ারের শিকার হন। ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের নানা হুমকির কারণে সেই নির্যাতনের কথা প্রকাশ করতে পারেননি তারা। ফ্যাসিবাদের অনুগত মিডিয়াগুলোতেও তুলে ধরা হয়নি এসব ভয়ংকর আলেম নির্যাতনের চিত্র। উল্টো আলেমদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর মত নানা কল্প কাহিনি প্রকাশ করা হয় দেশের ও ভারতের আওয়ামী-বাম সমর্থক বিভিন্ন মিডিয়ায়। সোমবার ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে নির্যাতিত জনসাধারণের পাশাপাশি আলেমদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। এমনই সময় ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে নতুন করে প্রকাশিত হয় মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত দৈনিক আমার দেশ। আর পুনরায় প্রকাশনার শুরু থেকেই আওয়ামী শাসনে নির্যাতিত আলেমদের কথা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে পত্রিকাটি। সিনিয়র রিপোর্টার রকীবুল হকের লেখা সেই প্রকাশিত রিপোর্টগুলোর সংকলনই হলো-‘আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন’ বইটি। দেশের হাজারো নির্যাতিত আলেমদের মধ্য থেকে এই বইয়ের ২২৪ পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে আলোচিত ৪৩ জন নির্যাতিত আলেমের জীবন্ত চিত্র।
লেখকের মতে, দীর্ঘদিন ভয়ভীতি ও মিডিয়ার একপাক্ষিক প্রচারণার কারণে এসব তথ্য প্রকাশ পায়নি। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর নির্যাতনের ঘটনা উন্মোচিত হতে থাকে। রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের পাশাপাশি বছরের পর বছর কারাগারে আবদ্ধ রাখা হয় বহু আলেমকে। নানা হুমকির কারণে সেই নির্যাতনের কথা প্রকাশ করতে পারেননি তারা। ফ্যাসিবাদের অনুগত মিডিয়াগুলোতেও তুলে ধরা হয়নি এসব নির্যাতনের চিত্র। উল্টো আলেমদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর মতো নানা কল্প কাহিনি প্রকাশ করা হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দল হলেও, তাদের রাজনৈতিক দর্শন মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা (ঝবপঁষধৎরংস)-নির্ভর। অপরদিকে আলেম সমাজ ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামী আদর্শ ও শরীয়াহভিত্তিক সমাজব্যবস্থার পক্ষপাতী। এই দার্শনিক পার্থক্য থেকেই উভয়ের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মতবিরোধের সূচনা। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর বহু আলেমকে গ্রেফতার, নির্যাতন ও মাদ্রাসায় অভিযান চালানো হয়। ২০২১ সালে মোদির আগমনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আলেমদের বিরুদ্ধেও ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনাগুলোকে “অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ” হিসেবে সমালোচনা করে। তারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মানবাধিকার সংস্থা যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিছু প্রতিবেদনে বলেছে—শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় মতপ্রকাশের কারণে আলেমদের আটক করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও বিচারবহির্ভূত আচরণের অভিযোগ রয়েছে। আলেম নিপীড়নের অভিযোগে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে আস্থাহীনতা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করছে। ইসলাম অনুযায়ী, আলেম সমাজকে সম্মান ও স্বাধীনতা প্রদান করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “আলেমরা নবীদের উত্তরসূরি।” (আবু দাউদ)। অতএব, আলেমদের অবমূল্যায়ন বা নিপীড়ন ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর অন্যায়।
লেখক রকীবুল হকের জন্ম ঝিনাইদহের কোলা গ্রামে। শৈশব থেকেই বই ও লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে কাজ করার পর বর্তমানে আমার দেশ পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছেন। সাংবাদিকতা বিষয়ে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। বইটি পাওয়া যাবে অনলাইন বুক শপ রকমারিসহ দেশের বিভিন্ন বুকস্টল ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বই মেলায়।
লেখক : রকীবুল হক
নাম : আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন
প্রকাশনী : তাজদিদ পাবলিকেশন
মুদ্রিত মূল্য : ৩৪৭ টাকা
পৃষ্ঠা : ২২৪
ধরণ : পেপারব্যাক