সুরুয খান
ভাবো তো, আমাদের শরীরের ভেতরে একদল অদৃশ্য পুলিশ সারাক্ষণ টহল দিচ্ছে! তারা খুঁজে বের করছে জীবাণুদের, যারা আমাদের অসুস্থ করতে চায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলোÑএই পুলিশরা যেন ভুল করে নিজের শরীরকেই আক্রমণ না করে ফেলে!
এই রহস্যই উদ্ঘাটন করেছেন তিন অসাধারণ বিজ্ঞানী। তাঁরা মেরি ই. ব্রানকো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাকাগুচি। আর সেই জন্যই তাঁরা পেয়েছেন ২০২৫ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার!
আমাদের শরীরে আছে এক দারুণ ব্যবস্থাÑরোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম। এটি যেন দেহের নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু কখনও কখনও এই নিরাপত্তারক্ষীরাও বিভ্রান্ত হয়ে নিজের শরীরকেই শত্রু ভেবে আক্রমণ করে বসে। তখনই ঘটে স্বয়ংক্রিয় রোগ (Autoimmune Disease)। এই তিন বিজ্ঞানী খুঁজে বের করেছেন রেগুলেটরি টি সেলস নামের এক বিশেষ কোষ, যারা শরীরের “অতিরিক্ত উত্তেজিত” রোগপ্রতিরোধ কোষগুলোকে শান্ত রাখে। তারা যেন শরীরের ভেতরের “শান্তি রক্ষাকারী বাহিনী”- যে বাহিনীর কাজ নিজের দেহকে নিজেই ধ্বংস করা থেকে রক্ষা করা।
১৯৯৫ সালে জাপানের বিজ্ঞানী শিমন সাকাগুচি প্রথম বুঝতে পারেন, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শুধু এক জায়গা থেকে নয়, বরং “কেন্দ্রীয়” ও “প্রান্তিক”Ñদুইভাবে কাজ করে। এরপর ২০০১ সালে মেরি ই. ব্রানকো ও ফ্রেড রামসডেল ইঁদুরের মধ্যে এমন এক জিন (Foxp3) খুঁজে পান, যার ত্রুটি থাকলে স্বয়ংক্রিয় রোগ দেখা দেয়। ২০০৩ সালে সাকাগুচি প্রমাণ করেন, এই (Foxp3) জিনই “রেগুলেটরি টি সেলস” তৈরির মূল চাবিকাঠি।
এই গবেষণা এক নতুন দরজা খুলে দেয়-যেখানে বিজ্ঞানীরা এখন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কঠিন রোগের নতুন চিকিৎসা খুঁজছেন।
এই তিন বিজ্ঞানীকে নোবেলের গৌরবে পুরস্কৃত করেছে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। তাঁরা পাচ্ছেন মেডেল, সনদপত্র এবং ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা পুরস্কার। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে ক্যাম্পে বলেছেন, “তাঁদের আবিষ্কার আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে কেন আমরা সবাই গুরুতর রোগে আক্রান্ত হই না। এই জ্ঞান চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎকে বদলে দেবে।” প্রসংগত, নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল বিস্ফোরক ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন। জীবনের শেষদিকে তিনি উইল করে যান, তাঁর সম্পদ যেন প্রতি বছর মানবকল্যাণে কাজ করা বিজ্ঞানী, লেখক ও শান্তিকর্মীদের দেওয়া হয়। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কার এখন ছয়টি বিভাগে দেওয়া হয়-পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি, সাহিত্য ও অর্থনীতি।