খন্দকার নূর হোসাইন

ঘাসের ওপর বসে পড়লো ওরা। একটু বাদেই হৈ হুল্লোড়ের শব্দে উঠে দাঁড়ালো। লিয়ার একটি সৈন্যদল ঘিরে ফেলেছে ওদের। কমান্ডার হুংকার ছুড়লো, ‘অ্যান্ডি! আত্মসমর্পণ করো। পালানোর কোনো পথ নেই।’

‘বাহ্,’ অ্যান্ডি হাততালি দিলো, ‘তোমাদের এতই অধঃপতন হয়েছে, ন্যায়-অন্যায় কিছুই দেখো না।’

অন্য পিঁপড়েরাও তাতে সায় দিলো, ‘ছি! ছি! তোমরা জাতির মুক্তিদাতাকে গ্রেফতারের জন্য এসেছো? তোমরা জানো না ফগ কেমন ছিল?’

সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকেই এমন ছিল, যাদের বিবেক এখনো কিছুটা জীবিত ছিল। পরিস্থিতির জন্য তারা লিয়ার হুকুমে চলতো। প্রধান কমান্ডার যখন আ্যন্ডিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলো, তখন সেকেন্ড লেফটেন্টে অফিসার বিদ্রোহ করলো। সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুভাগ হয়ে গেল। বিদ্রোহীদের সাথে যুক্ত হলো অ্যান্ডিরা।

লিয়ার অনুগত সেনারা সহজেই পরাস্ত হলো। আহতদের গ্রেফতার করা হলো। এখানেই হলো অ্যান্ডির প্রথম ও দ্বিতীয় বিজয়। সমস্ত খবর ক্যাড কলোনিতে পৌঁছে দিলো। বাতাসের গতিতে কলোনির সবাই জেনে গেল ফগকে বাজপাখি ধরে নিয়ে গেছে। অ্যান্ডির পরিকল্পনায় সবকিছু হয়েছে। ক্যাড পিঁপড়েদের সংগঠিত করে ফেললো। লিয়া ও তার সমর্থকদের মনোবল ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তাদের শক্তির উৎস ফগ মারা পড়েছে। সেনাবাহিনীর মধ্যে দেখা দিলো দুটো গ্রুপ। মনোবল ফিরে পেয়েছে সাধারণ পিঁপড়েরা। চারদিকে লিয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। সাথে সাথে চলছে অ্যান্ডির বিজয় ধ্বনি। কলোনিতে প্রবেশ করলো অ্যান্ডি। শত শত পিঁপড়া ওকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ধরলো। সংঘবদ্ধ প্রতিরোধে পরাস্ত হলো লিয়ার ভঙ্গুর সেনাবাহিনী। অ্যান্ডি উত্তেজিত পিঁপড়েদের থামাতে পারলো না। দীর্ঘদিনের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উন্মাদ হয়ে উঠলো যেন সবাই। লিয়া পালাতে গিয়ে নালার পানিতে ডুবে নিহত হলো। চূড়ান্ত বিজয়ে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়লো পিঁপড়া কলোনিতে।

সবার সম্মতিক্রমে পিঁপড়ে কলোনির নতুন প্রধান নির্বাচিত করা হলো অ্যান্ডিকে। সিংহাসন গ্রহণের দিন জমকালো ভোজের আয়োজন করা হলো। দাওয়াত দেওয়া হলো মাকড়সা প্রধান রিসেল ও অন্য মাকসড়াদের। যোগ্য নেতৃত্বে আবারও ঐক্যবদ্ধ হলো পুরো পিঁপড়ে কলোনি। অ্যান্ডি তার বিরোধীদেরও ক্ষমা করে দিলো। ঘৃণা নয় ভালোবাসা ছড়িয়ে দিলো অ্যান্ডি। সেদিনের পর থেকে কলোনিতে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে এলো। ঐক্যবদ্ধ পিঁপড়েরা ক্রমেই সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। (সমাপ্ত)