ওমর বিশ্বাস

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই তার মনে হলো তার চোখের সামনে লাল একটা কি যেন নড়াচড়া করছে। সে এটা কি তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। প্রতিদিনের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে চায়। মনের ভিতর এটাকে রাখতে চায় না বলে বারবার মনকে অন্যকাজের দিকে ঘোরাতে থাকে। কিন্তু মনকে ঘোরাতে পারলেও একটু পরপর চোখের সামনে ওই ছবিটাই ভেসে ওঠে। একটা লাল জিনিস চোখের সামনে নড়াচড়া করছে। মনই তাকে ওদিকে নিয়ে যায়।

স্কুলে তার বন্ধু সিয়াম বলছিল, রাতের বেলা সে কি যেন দেখেছে। ক্লাস চলছে। ক্লাসের মধ্যেই ফাঁকে ফাঁকে সিয়াম ফিসফিস করে কথা বলছিল। কথাটা সে বলছিল পাশের ছেলেটাকে। সিয়ামের কথার ভিতর আসিফের মন চলে যায়। সে লুফে নেয় কথাটা।

কি দেখেছিস, কি দেখেছিস রে! আসিফ সিয়ামের হাত নাড়াতে নাড়াতে জিজ্ঞাস করতে থাকে। তাকে যেন শুনতেই হবে, এমন একটা কথা না শুনলেই নয়।

আসিফের আর কথাটা শোনাই হলো না বিকালের আগে। ক্লাসে স্যার সোরগোল হচ্ছে বলে ধমক দেন। সবাই চুপ হয়ে যায়। আসিফ ক্লাসে কয়েকবার উসখুস করেছিল। সিয়ামের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছিল। আগ্রহ চেপে রাখা মুশকিল। কিন্তু স্যার তার ঘাড়টা সোজা রাখতে বললে শেষমেষ তাকে ব্যাপারটা হজম করে থাকতে হয়। এরপর দু’জনের আর ফুসরত হয়নি এটা নিয়ে আলোচনা করার।

স্কুল শেষে তো সিয়ামকে পাওয়াই যাবে। কাজেই আর কি করা, ততক্ষণ ধৈর্য ধরতে হবে আরকি।

বাসায় যাওয়ার সময় আসিফকে কিছু বলতে হয়নি। সিয়ামই বলতে থাকে, সে একটা লাল কি যেন আকাশে দেখেছে। কথাটা শুনেই আসিফ থেমে যায়।

সিয়াম জিজ্ঞেস করে, সে দাঁড়ালো কেন?

আসিফ জানতে চায়, কি দেখলি!

আসিফের আগ্রহ দেখে সিয়াম অবাক হয়। ওর গলার স্বর অন্যরকম। চোখে কিছু একটা আছে। সিয়াম আগ্রহ নিয়ে বলে, শুধু কালকে দেখিনি। এর আগেও ওরকম কিছু একটা দেখেছি। দশ-বারো দিন আগে।

বলিস কি! আসিফ বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞাসা করে।

সে তো দেখেছে মাত্র দুদিন আগে আর গতকালকে। সিয়াম দেখেছে দশ-বারো দিন আগেই। তাহলে কি সেটাকে আকাশে তিনবার দেখা গেছে। আসিফ চট করে হিসাব করে নেয়। সিয়ামকে প্রশ্ন করে, সত্যি!

তার ঘোর লেগে যায়। কিছুতেই স্থির হতে পারে না। সিয়াম তাকে আরো অবাক করে দিয়ে বলে মাসখানিক আগেও সে আকাশে এরকম লাল একটা কিছু দেখেছিল। অনেক তারার ভিতর লাল একটা কি যেন। তখন ওরকম কিছু মনে হয়নি। কাঁধটা উঁচু করে হেয়ালিভাবে বলল, আর কি হবে? ধুর। কতকিছুই তো দেখি, সব কি আর মাথায় নেই? চোখে ধান্ধা দেখার মতো মনে হওয়াতে সিয়ামের তেমন কিছু মাথায় আসেনি।

একথা শুনে আসিফ মনে মনে ভাবে তাহলে কি চারবার! চারবার দেখা গেছে। না আরো অনেকবার!

আসিফ নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে। হতে পারে এটা তাদের দুজনের মনের ভুল। তবু সন্দেহ একটা যেন বুকের ভিতর খামচে ধরে। ওটা তাহলে কিছু একটা হবে। লালপিণ্ডটা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায় কিভাবে? আর দেখা যায় না কেন? বুকের ভিতর একটা খচখচানি তৈরি হয়। সিয়ামের কথায় মনে হলো তারও এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে।

আসিফ একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায়। আসিফের বাহুতে নাড়া দিয়ে সিয়াম বলতে থাকে, জানিস, তাজিন একবার দেখেছে। ক্লাসে যখন সে তাজিনকে বলছিল, তাজিন বলল, সেও কবে জানি ডিমের মতো লাল একটা কিছু রাতের আকাশে দেখেছে। এরমধ্যে তো স্যার এসে পড়ল। কথাগুলো শেষ করা গেল না। ওমা যে রাগি স্যার! ঘাড়ই তো ঘুরানো যায় না। দাঁড়া, কালকে আবার ওরে জিজ্ঞাসা করবো। তোরও দেখি ইন্টারেস্ট আছে। বলতে বলতে সিয়াম চটকরে আসিফকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল, ধুর বোকা! তোর জন্যই তো আমি আর ওর সাথে কথা বলতে পারিনি।

আসিফ ধাক্কা খেয়ে থমকে যায়। তার তো বিস্ময় আছে। তার উপর আবার বিস্ময় যোগ হয়েছে সিয়ামের কথায়। তাজিনও দেখেছে! ব্যাপারটা কেমন যেন। সে চিন্তা করছিল। সিয়ামের ধাক্কা খেয়ে হতবুদ্ধির মতো অবস্থা। বলল, আমি কি করলাম আবার!

শেষে তারা ঠিক করলো এটা কি হতে পারে তা আরো দেখার চেষ্টা করবে। আরো কয়েকদিন দেখা যাক, আকাশে ওটাকে আবার দেখা যায় কিনা। প্লেনটেøন হলে তো বোঝাই যেত। তাছাড়া আকাশের তো রক্ত নেই যে ঝরে ঝরে পড়বে। প্রয়োজনে নিজেরা ভালো করে দেখবে। যদি তেমন কিছু হয় সেটা নিয়ে তাদের ভাবতে হবে। (চলবে)