ওমর বিশ্বাস

আসিফের ঘুম ভেঙেছে সকাল সকাল। প্রতিদিনকার মতোই। রাতে দেরিতে শুয়েছিল। তাতে সমস্যা হয়নি। ঘুমটা খুব গাঢ় হওয়ায় অল্প ঘুমেই বেশ ফ্রেশ। ভালো লাগছে। শরীরটা খুব হালকা হালকা। আজকে স্কুলে একটু আগে যাওয়ার কথা। সেখানে একটি প্রদর্শনী হবে প্রযুক্তি নিয়ে। বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি আর কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হচ্ছে এই প্রদর্শনীর। তার বিশেষ কোনো কাজ না থাকলেও তার বন্ধুদের কেউ কেউ যে সব প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে তাদের কারো কারোর সাথে জড়িত হয়েছে। তারা সময় দেবে স্টলগুলোতে। বিজ্ঞান নিয়ে যারা আগ্রহী তারাই মূলত জড়িত থাকতে চায়। সেখানে তার বন্ধুরা থাকবে। ওদের সাথে দেখা করা দরকার। পড়াশুনার কয়েকটা বিষয় আলাপ আছে। আজকে না গেলে প্রদর্শনীর জন্য সামনের কয়েকদিন ওরা ব্যস্ত থাকবে তাই আর সময় পাওয়া যাবে না।

তারপরও আসিফে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। রোজকার মতো গড়িমসি করতে করতে ঘর থেকে বের হলো। এরকম গড়িমসি করা তার একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দেরি হওয়াতে কাউকে পাওয়া গেল না। যথারীতি ক্লাসগুলো করে বাসায় ফিরে আসতে হলো। আসার সময় স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে কাজের প্রস্তুতি দেখছিল। যে যার মতো স্টল বানাচ্ছে। রঙিন, বাহারী যে যত সুন্দর করতে পারে। এদিক-সেদিক টুকরাটাকরা জিনিসপত্র পড়ে আছে। সেখান থেকে কিছু উচ্ছিষ্ট হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বাসায় চলে আসে আসিফ।

এরমধ্যে তার একটুও মনে পড়েনি রাতের ঘটনাটা।

দুদিন পর আসিফ আবার দেখলো একটা লালপিণ্ড আকাশে নড়াচড়া করছে। রাতে খেয়েদেয়ে আবার টেবিলে বসেছে পড়ার জন্য। জানালাটা খোলা ছিল। দোতলা বাসা। রাতে সরাসরি জানালার বাইরে তাকালে প্রথমে অন্ধকার লাগে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে খানিকপর ভয় লাগে। অন্ধকারের ভিতর ভয়ের একটা বাসা থাকে। সেখান থেকে কেউ বেরিয়ে আসবে। অন্ধকার আস্তে আস্তে আস্ত একটা মানুষকে গিলে খাওয়ার জন্য কাছে চলে আসবে। তাই আসিফ সহজে প্রথমেই সরাসরি সামনের দিকে তাকায় না। উপরের দিকে তাকালে সোজা আকাশ দেখা যায় বলে আকাশের আবছা আলোতে দৃষ্টির সামনের জায়গাগুলোকে অন্যরকম লাগে। তাতে অন্ধকার লেগে থাকে না বলে ভয়ও তেমন লাগে না।

আজো আসিফ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওইভাবে জানালার বাইরে দিয়ে আকাশ দেখছিল। একসময় মনে হলো কি যেন একটা তার চোখের সামনে নড়াচড়া করছে। সে সোজা হয়ে বসল। চোখ তার স্থির। ওইটা নিচের দিকে আসছে। এবার সে আরো সোজা হয়।

আরে! ওটা তো সেই জিনিস, দুদিন আগে দেখেছি। তার মনে পড়ে যায়, সেদিন সে বস্তুটাকে ক্রমেই নিচের দিকে আসতে দেখেছিল আর ওটা একটু একটু করে বড় হচ্ছিল। তার সেই রাতের কথা এবার মনে পড়ল। সে তো ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপর কি হয়েছিল জানে না। আজ যখন সে লাল জ্বলন্ত পিণ্ডটা দেখলো ওইদিনকার ওই পর্যন্তই মনে করতে পারল।

তার চোখ পড়ার টেবিল ছেড়ে বাইরে চলে গেছে। আটকে গেছে ওটার দিকে। সে কোনো কিছুই ভাবে না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ওটাকে দেখতে থাকে। মনের ভিতর কোনোপ্রকার প্রতিক্রিয়া নাই। শুধু চোখ ওইদিকে। দেখছে একটা লালপিণ্ড তার দিকে উপর থেকে নেমে আসছে। কোণাকুণি। তার চোখের ভিতর ঢুকে যাবে এমন সময় কে যেন তার রুমের দরজায় গুতা দিলো।

আসিফের মন ঘুরে যায় অন্যদিকে। সে পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

খানিক পড়ার পর তার আর ভালো লাগছিল না। আর কিছুতেই পড়ায় মন দিতে পারে না। একরকম অস্বস্তি লাগছিল। সে পড়বে না ঘুমাবে ঠিক করতে না পেরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার মনটা সবদিক দিয়েই এলোমেলো হয়ে যায়।

আসিফ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। (চলবে)