জুলাই বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক নয়, এটা ছিল একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ, সেই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সার্বিক তত্বাবধানে মহানগর নাট্য সংসদের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনদিন ব্যাপী জুলাই বিপ্লব নাট্যোৎসব গত শনিবার শেষ হয়েছে।
সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি মাহবুব মুকুল'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রথম দিন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সংস্কৃতি চিন্তক কলামিস্ট, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. শাহ মুহাম্মদ বুলবুল ইসলাম।
১ম দিন ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার চারটি নাটক মঞ্চাস্থ হয়। নাটক : শহীদ হাফেজ জোবায়ের, দল: সাইমুম কিশোর থিয়েটার, রচনা: হুসনে মোবারক, নির্দেশনা: তাওহীদ আলম মণ্ডল। নাটক- ইচ্ছে, আজিজ সাইফুল্লাহ'র একক নাটক। নাটক : ডাইনির লেজ, দল: অক্সিজেন কালচারাল গ্রুপ, রচনা: মোবারক হুসাইন, নির্দেশনা : এইচ এম তানভীর হাসান।
নাটক: হারাধন রাজার বঙ্গদর্শন, দল: AGB থিয়েটার, রচনা ও নির্দেশনা: আব্দুল গণি বিদ্বান।
দ্বিতীয় দিন ২৫ জুলাই, শুক্রবার প্রধান অতিথি ছিলেন আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি প্রফেসর ড. শামসুল আলম। এদিন তিনটি নাটক মঞ্চায়ন হয়েছে। নাটক: ৩৬ জুলাই, দল: মহানগর নাট্য সংসদ, রচনা: শফিকুল ইসলাম রুবেল, নির্দেশনা: এবিএম নোমান। নাটক: গারদের বন্দী, দল: স্বাপ্নিক থিয়েটার, রচনা: হুসনে মোবারক, নির্দেশনা: এইচ এম তানভীর হাসান।
নাটক : মহাবিদ্যা, দল: রূপনগর থিয়েটার, রচনা: মনোজ মিত্র, নির্দেশনা: মাহি মাহফুজ।
তৃতীয় দিন ২৬ জুলাই শনিবার প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্য ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ডা. আবু হেনা আবিদ জাফর, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় নাট্য অভিনেতা আব্দুল আজিজ।
এদিন নাটক : রক্তে আগুন লেগেছে (মাইম আর্ট)
নিথর মাহমুদ এর একক নাটক। নাটক: ৩৬ জুলাই,
দল: মহানগর নাট্য সংসদ,
রচনা: শফিকুল ইসলাম রুবেল, নির্দেশনা: এবিএম নোমান। নাটক: গারদের বন্দী, দল: স্বাপ্নিক থিয়েটার, রচনা: হুসনে মোবারক, নির্দেশনা: এইচ এম তানভীর হাসান। নাটক : শহীদেরা ফিরে আসে, দল: বাংলা মটর থিয়েটার, রচনা: স্বজন জহির, নির্দেশনা: আব্দুল হাই সেলিম।
নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্দেশক হুসনে মোবারক'র নির্দেশনায় প্রতিদিন বিকাল চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে রাত অব্দি চলে।
তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. রফিকুল ইসলাম, ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর জসিমউদদীন, নাট্য ব্যক্তিত্ব মোশারফ হোসেন রাজু, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক শাহিন হাসনাত, সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সেক্রেটারি আল্লামা ইকবাল, সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রহমান, কবি ফররুখ সংসদের সেক্রেটারি জাহিদ আবেদীন, নাট্যদল থিয়েটার ইউনিটের সভাপতি এইচ এম নূর, মঈন মুনতাসীর।
উৎসবে বক্তারা বলেন জুলাই আন্দোলন সংস্কৃতিকে নতুন পথ দেখিয়েছে। জুলাই বিপ্লব প্রতিবাদ প্রত্যয়ের এক সাংস্কৃতিক মঞ্চ। তাই বিপ্লবের স্পিডকে ধারণ করে সকলকে পারষ্পরিক সম্পর্ক, সহযোগিতা, ঐক্য বজায় রাখতে হবে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধের পথেই প্রতিটি সংকট উত্তরণে সংস্কৃতি আলো জ্বেলে দিবে। সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই আসবে নতুন দিন। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি মাহবুব মুকুল বলেন জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় এই আয়োজন। বিপ্লবকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোই এ উৎসবের লক্ষ্য। মানবিক সংস্কৃতি বিকাশে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো: মিন্টু, সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদের নির্বাহী পরিচালক আবু মুসা, এসএসকের সহকারী সেক্রেটারি এম এ তাওহিদ, সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর পরিচালক জাহিদুল ইসলাম।
প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে তিনদিনে ১১ টি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। জুলাই সংগ্রামের বর্ণনা সম্বলিত নাটকের চরিত্রগুলো এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা দর্শকদের কাঁদিয়েছে, আবার ফ্যাসিস্ট পালানোর অভিনয়ে সবাইকে হাসিয়েছে। অভিনয়ে নজর কেড়েছেন এবিএম নোমান, স্বজন জহির, ফারুক খান, আব্দুল গণি বিদ্যান, হাসান ঢালি, আব্দুল হাই সেলিম, রেজাউল করিম সবুজ, জাবির আল মাহমুদ।
কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী আরজে টুটুল, কামাল মিনা, তারিক হাসিব, সৈয়দ আল জাবের। সংগীত পরিবেশন করেন মহানগর শিল্পী গোষ্ঠীর পরিচালক আবু রায়হানের নেতৃত্বে শিল্পী আব্দুল্লাহ আল নোমান, এমসি মামুন, শফিক আদনান, পিএম মিজান,একে জিলানী, মুজাহিদ জামান, সেলিম রেজা, আতিক তাশরীফ, এসএম ইদ্রিস, সাঈদ সুমন। কিশোর শিল্পী জাহিন ইকবাল, বিপ্লবী সংগীত শিল্পী ইকবাল হোসাইন, আলফাজ হোসেন, আব্দুস সালাম শাওন।
সংগীত, কবিতা আবৃত্তি আর নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে কয়েক হাজার মানুষ জুলাই বিপ্লব নাট্যোৎসবের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।