ইব্রাহীম মন্ডল

শব্দের দৃশ্যমান রূপই লিপি বা বর্ণ। সভ্যতা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। কথা চিন্তা জ্ঞান বিজ্ঞান স্থান কালের গন্ডি পেরিয়ে স্থায়িত্ব লাভের একমাত্র উপকরণ। মানুষ তার অবস্থান অস্তিত্বকে জানাতে যুগে যুগে গাছের পাতা গাছের ছালে, বাকলে, পশুর চামড়ায়, পাহাড়ের গায়ে, লিপির মাধ্যমে তাদের আবেগ-অনুভূতি, মনের কথাকে বলার চেষ্টা করেছে। এই লিপির উদ্ভব কখন কিভাবে হয়েছে, হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা নেই। তবে মহান আল্লাহ হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টির পর অনেক কিছুর নাম শিখিয়েছিলেন। এবং প্রশ্ন করেছিলেন। আলাসাতুহু বিরাব্বিকুম? আমি কি তোমার প্রভু নই? হযরত আদম আঃ উত্তরে বলেছিলেন, “ক্কালু বালা” মানে” জী “অতএব নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে মানব মনে প্রথম উচ্চারিত ভাষা আরবি। এই ভাষাতেই হযরত জিবরাইল আ: আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সঃ এর কাছে কোরআন নাজিল করেছেন। “ইক্করা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক, খালাকাল ইনসানা মিন আলাক।” পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ঘনীভূত রক্তপিন্ড থেকে। (সুরা আলাক, আয়াত, ১২) আল্লাহ সুন্দর তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। যারা সুন্দর চর্চা করেন আল্লাহ তাঁদেরকেও পছন্দ করেন। প্রিয় নবী রাসুল সঃ ক্যালিগ্রাফির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার জামাতা হযরত আলী রা: একজন ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। তিনি বলতেন, সুন্দর হস্তাক্ষর সত্যকে স্বচ্ছ করে তোলে। আজ পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষা আছে যেগুলো নান্দনিকতায় সমৃদ্ধ, এগুলো একদিনে হয়নি। শিল্পীদের হাতে পরিশীলিত হয়ে ক্রমান্বয়ে এপর্যায় এসেছে। মুসলিম শাসকরা ক্যালিগ্রাফারদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। তাদেরকে রাষ্ট্রিয় সন্মানজনক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। ইসলামী শিল্পের এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও এই শিল্পকে সমৃদ্ধ এ গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে আমরা আশির দর্শক থেকে কাজ শুরু করি, প্রথম প্রদর্শনীর অংশগ্রহণকারী সংখ্যা পাঁচ জন থাকলেও এখন যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে শিল্পী সংখ্যা তেমনি দর্শকের সংখ্যা। গত ২৩ আগস্ট জাতীয় জাদুঘরে নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে হয়ে গেল ক্যালিগ্রাফি ও গ্রাফিতি শিল্প প্রদশনী। ৩৬ জুলাই ২য় স্বাধীনতার বষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদ আয়োজন করে এই প্রদর্শনী। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। শিল্পযোগ আয়োজিত প্রদর্শনী শুরু হয় তৃতীয় ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং প্রদর্শনী বাংলাদেশ। ক্যানভাসে, কাগজে নানা রঙের নানা আকৃতির অক্ষর। কেবল অক্ষর নয়, কখনও শব্দে ও বাক্যে সেজেছে বিচিত্র সব ছবি। আরবির পাশাপাশি বাংলা ভাষাও ব্যবহার করা হয়েছে ছবিতে। দেড় শতাধিক শিল্পীর আড়াইশো শিল্পকর্ম দিয়ে শুরু হয়েছে ৩য় ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং প্রদর্শনী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে ৩ মার্চ শুক্রবার এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সভাপতি ছিলেন শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ। প্রদর্শনী চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। প্রদর্শনী আয়োজন করেছে এম এম ফাউন্ডেশন ও শিল্পযোগ।

আমি আশা করি শিল্পে নতুন বৈচিত্রময় ধারা আপনাদের হৃদয় মনকে আন্দোলিত করবে, নাড়া দেবে। আশাকরি দৃষ্টিনন্দন শিল্পের সমাহার দর্শককে আনন্দ দিবে এবং প্রদর্শনী সফল হবে ইনশাল্লাহ।

রংরেখা ফর্ম ও বর্ণের নান্দনিক এক অসাধারণ সমাহার বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদ আয়োজিত গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি ২৩ আগস্ট সকাল ১১টায় উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ভিসি, সাবেক এ্যাম্বাসেডর অধ্যাপক ড. আনোয়াল্লাহ চৌধুরী। প্রধান বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ফ্যাকাল্টির সাবেক চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পী অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার, সাবেক প্রাচ্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ফকির, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক সিনেট সদস্য রফিকুন্নবী, প্যানভিশন টিভির সিও মাহবুবুল মুকুল, দেশীয় সংস্কৃতি সংসদের সেক্রেটারি ড. মোস্তফা মনোয়ার। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি ইব্রাহীম মণ্ডল। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুরআন তেলাওয়াত করেন আব্দুল আলিম আশিক। হামদ তায়ালা পেশ করেন শিল্পী হাসনাত আব্দুল কাদের। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন শিল্পী ও বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সেক্রেটারি মোফাসির আহমদ ফয়েজী। শিল্পীসহ বিপুল দর্শক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

দেড় শতাধিক শিল্পী থেকে বাছাইকৃত ৮২ জন শিল্পীর ১১৩টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এর মধ্যে রয়েছে গ্রাফিতি।

৩৬ জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট স্বৈর সরকার বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল গ্রাফিতির। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, জেলা-উপজেলা শহরের বাউন্ডারি দেয়াল মেট্রোরেলের পিলার এবং সুড়ঙ্গ রাস্তার দুই পাশে গ্রাফিতি ছেয়ে গেছে। দ্রোহের ভাষা ছড়িয়ে দিয়েছে। দেখলে মনে হয় এ যেন এক প্রতিবাদী কাব্য স্পেপেইন্টি। মার্কার পেন প্লাস্টিক রং দিয়ে মোট ব্রাশ ব্যবহার করেছে। দেয়ালগুলোয় লেখা হয়েছে উজ্জীবিত স্লোগান কবির পঙক্তি, প্রতিবাদী সাহসী উচ্চারণ।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পী হলেন ড. আব্দুস সাত্তার, ড. মিজানুর রহমান ফকির, ড. নূরুল মুকাদ্দিস, মাহবুব মোর্শেদ, ইব্রাহীম মণ্ডল, আব্দুর রহীম, মোফাচ্ছির আহমদ ফয়েজী, ফেরদৌস আরা, আনিুল ইসলাম ইমরুল, খোন্দকার মনিরুজ্জামান, সাইফুল্লাহ সাফা, উসমান হায়াত, মঞ্জুর হোসেন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোল্লা হানিফ, উসামা হক, আশিকুর রহমান খান শাহরিয়র, সিদ্দিকা আফরিন লামিয়া, মনতাসির হক, উসাইড মুহাম্মদ, জান্নাতুল বুশরা, ড. জান্নাতুল মাওয়া, কবিনুর ইসলাম, শোয়েব মাহমুদ, মো. আহসান উল্লাহ, আবু সুফিয়ান, মো. মায়েম, মাহফুজা আকন্দ, বাদরিয়া জামান, আব্দুল্লা ভুইয়া, মো. তামিম দারী, মো. আলামিন। ইউসা হুসাইন, সাজু তাওহীদ, মো. সাজ্জাদুর রহমান সাহিন, নূরুননাহার ফাবিহা, সাফি, মিল্লাহ হোসাইন, আব্দুর রহমান রুমী, রাইহান সাদী, তাজরিন মল্লিকা, আনাজ খান, সানজিদ আহমদ, ফারুক, সুলতানা মিমি, মারিয়া মামুন, সিফাতুল্লাহ বিন হাফিজ, মোহাম্মদ আরাফা, আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ, মাসুমা সাইদা, জহিরুল ইসলাম, মাহমুদুস সামাদ, রুবাবা, নাইমা জান্নাত, মো. হুজাইফা ইসলাম, মো. এরশাদ বিন সাকিল, রউজা রহমান, জেরিন সাবা, নাহিন ফায়াজ, জেরিন সোবাহ রোহিয়া, রোবাবা মাসরুফা, মোজদালিফা, মো. আ. লতিফ, মো. মোনতাসির হাসান, রুহী জান্নান রাজি, তামান্না সুলতানা, মরিয়ম জামিলা, জান্নাতুল মাওয়া, জাফরিন জাহারু ও নুসাইবা আক্তার সহ আরও অনেকে।