ওমর বিশ্বাস

জায়গাটা একটা নদীর ধারে। নদীর ধার ধরে অনেক দূর পর্যন্ত বন। কোথাও কোথাও অনেক ঘন। আশেপাশে জঙ্গলও আছে। এলাকাটা ঘন গাছপালায় ঘেরা। হঠাৎ হঠাৎ কিছু কিছু জায়গা খালি দেখা যায়। কোথাও অল্প জায়গা নিয়ে, কোথাও বেশ জায়গা নিয়ে খালি মাঠের মতো জায়গা পড়ে আছে। জঙ্গলের সামনে দিয়ে রাস্তা চলে গেছে উত্তর দিক ধরে শহরের দিকে। দক্ষিণ দিকটা একটু বেশি নিরিবিলি। এই জায়গায় মানুষজনের আনাগোনা কম। বেশ দূরে দূরে কিছু কিছু বসতি দেখা যায়।

সমস্যা হচ্ছিল পূর্ব দিকে। সেখানে কিছু দূর গেলে নদী। তাদেরকে নদী ডিঙাতে হবে দুই কিলো অতিক্রম করতে হলে। তাদের পরিকল্পনায় এই নদী আগে থেকেই হিসাবে ধরা আছে। তারা জানে তাদেরকে পৃথিবীতে এসে প্রয়োজনে নদীর মুখোমুখি হতে হবে। তাই কাজের সুবিধার জন্য পঞ্চম দলটাকেও পূর্বদিকের দলের সাথে অতিরিক্ত হিসাবে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে যাতে দুই দল মিলে সময়ের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। একদল কাজে বাধা পেলে অন্যদল যদি সহযোগিতা করে তাহলে দুই দলের একত্র শক্তি তাদের কাজে লাগবে।

এখানে তাদের একটা দারুণ পরিকল্পনা আছে। নদীর পানির উপরিভাগের জলীয় বাষ্পকে তারা গাছের পাতার সাথে বাতাসের ঘর্ষণের ফলে যে প্রবাহ তৈরি হয় তার সাথে সংযোগ করে দেবে। নদীর পানির শরীরে বাতাসের ধাক্কায় পানির উপরিভাগে যে স্পন্দন তৈরি হয় তা কাজে লাগানো হবে। এতে দুই সংযোগে একটা তরঙ্গ ঢেউ সৃষ্টি হবে। এই তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব পর্যন্ত উপগ্রহটি যে কোনোকিছুর উপস্থিতি টের পেতে এবং তার একটা প্রতীকী ছবি তুলতে সক্ষম। এর ব্যবহারিক ক্ষমতা আরো ব্যাপক করার চিন্তা তাদের আছে। এজন্য গবেষণা চলছে। আপাতত এখানে এই তরঙ্গ দিয়ে ঘিরে দেবে তাদের যন্ত্রযানটি। এতে একটা নিরাপত্তাবলয় তৈরি হবে উপগ্রহ ও তাদের নিজেদের জন্য।

এই তরঙ্গ সৃষ্টি যদি তারা করতে সফল হয় তাহলে তাদের এটা একটা বড় অর্জন হবে। এর জন্য কিছু ড্রোন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ছোট ছোট অটো মেশিন, দূর নিয়ন্ত্রিত মেশিন আশেপাশে পাঠানো হয়েছে। এসবের মাধ্যমে ভিতর থেকে ছবি দেখা হচ্ছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

অল্প সময়ের মধ্যেই ড্রোনগুলো নদীর পানির উপর ও নিচের একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের গভীরতা পর্যন্ত কয়েক লাখ ছবি সংগ্রহ করে নিয়েছে। এজন্য তাদের দুটো ড্রোনকে নিয়োজিত করতে হয়েছে।

আসিফরা বিজ্ঞানের খুব বেশি কিছু জানে না। এলিয়েনদের প্রতি তার ও বন্ধুদের ধারণাও তেমন না। তবে একটা আগ্রহ তাদের ভিতর কাজ করে। এলিয়েনরা মানুষের মতো কিছুÑ এরকম ধারণা ছিল আগে থেকে। তবে এলিয়েনদের জালে তারা জড়িয়ে পড়বে তা ভাবতেও পারেনি।

এলিয়েনরা জানে পৃথিবীকে যখন মানুষের বসবাসের উপযোগী করে সৃষ্টি করা হয়েছে এখানে অবশ্যই মানুষের বেঁচে থাকার মতো যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে। মানুষের নিজেদের সম্পর্কে আজ ভালো ধারণা নাইÑ এই মত পোষণ করে এলিয়েনরা।

যেটুকু ভালো ধারণা আছে তাও শেষ হয়ে যাবে একসময়। তাই এলিয়েনরা চায় একটা শূন্যতা তৈরি করে সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। তাদের মতে মানুষ এখন শুধু সম্পদ ধ্বংসই করছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে না। পৃথিবীতে এখন প্রায় বারো শ’ কোটি লোকের বাস। এই লোকগুলো একদিন নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে করতে নিঃস্ব হয়ে যাবে। ফেরত যাবে সেই প্রাচীন যুগে যে সময় মানুষ কোনোকিছু আবিষ্কার করেনি। শেখেনি আধুনিকতা। ধারণা ছিল না কোনো প্রযুক্তিগত বিদ্যার। আগামী একশ বছরে পৃথিবীর লোকসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে বিশ শত কোটি। তখন মানুষ আবার মূর্খের দিকে ফিরে যাবে।

কাজেই এখন যে সম্পদ আছে সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করার এখনই সময়। এখানে সেখানে প্রচুর সম্পদ পড়ে থাকে তা সহজে নিয়ে নেওয়া যায়। কেউ কিছু করতে পারবে না। কাজের সুবিধার জন্য তারা সাগর বা নদীর কাছাকাছি এলাকা বেছে নেয়। তবে একটু দূরে অবস্থান করে।

এই মনুষ্য শ্রেণির উপর নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে হলে অবশ্যই এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দখলে নিতে হবে এদের প্রাকৃতিক সম্পদ। যদি একবার নেওয়া যায় তাহলে এই মানুষকে নিজেদের হাতের মুঠোয় আনা যাবে। যদি একান্তই নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় তাহলে কি করতে হবে, সে রকম নেগেটিভ অবস্থানের মধ্যে কাজ কিভাবে হবে, সে সব চিন্তাও তারা করে রেখেছে।

তারা ধীরে ধীরে আরো এলিয়েন পাঠাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। আর ধরে ধরে লোক নিয়ে তাদের ভিতর পরিবর্তন এনে নিজেদের কাজ করাবে।

কোথা থেকে এসেছে, কে পাঠিয়েছে সে সব পরিচয় গোপন রেখে কাজ করতে হবে।

পৃথিবী চলবে এলিয়েন দ্বারা।

এজন্য মানুষকে দখলে নিতে হবে। তাদের আচরণ, স্বভাব, চরিত্রে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। (চলবে)