রিতা ফারিয়া রিচি
মাহমুদ মেঘ যিনি আপাদমস্তক একজন ছান্দসিক কবি, ছড়াকার এবং কথাসাহিত্যিক। মূলত ছড়া-কবিতায় বেশি বেশি পদচারণা করলেও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও যথেষ্ঠ ভালো হাত। বহুল প্রচারিত ছড়ার কাগজ ‘শিশুটামি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দীর্ঘদিন উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ছড়া পড়ে মুগ্ধ হবে না এমন পাঠক নেই। তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক। শিশু-কিশোরদের নিয়ে অসংখ্য ছড়া লিখেছেন। জন্মগ্রহণ করেছেন পিরোজপুর জেলায়।
এই গুণী ছড়াকারকে আমি চিনি ২০১০ সাল থেকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার লেখা অধিকাংশ ছড়া-কবিতাই আমার চোখে পড়তো। আমি প্রতিটি লেখাই আদ্যোপান্ত পড়ার চেষ্টা করতাম। একজন সৃষ্টিশীল লেখক বলতে যা বোঝায়, আমি তার মধ্যে সেটাই উপলব্ধি করেছি। অনেক বছর ধরেই তার কাব্যশিল্পের সাথে আমার নিবিড় পরিচয়।
তিনি কবি, ছড়াকার এবং প্রাবন্ধিক। প্রথম পরিচয়ে তাকে আমি ছড়াকার হিসেবে জানলেও, তিনি মূলত অনেক কাজে সিদ্ধহস্ত। ছড়া কেন্দ্রিক সাহিত্য পরিচালনাই করতেন অধিকাংশ সময়। তার ধ্যানে-জ্ঞানে ছড়া-কিশোর কবিতার ফুল পাখিরা দোলা দিতো সারাক্ষণ। তার সমকালীন ছড়ায় দেশ, দ্রোহ এবং প্রেমের ছাপ স্পষ্ট। পরবর্তীতে সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখা তার দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় উজ্জিবীত হতে থাকে। দীর্ঘদিন লেখালেখি করলেও তার কোনো বই প্রকাশ না হওয়াতে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। অবশেষে ২০২৪ বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ “কইতরে বই পড়ে”। একজন পাঠক হিসেবে বইয়ের নামকরণ বিচার করলেই বোঝা যায় বইটি আসলে কেমন হতে পারে। চমৎকার প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ, ছাপা এবং বাঁধাইয়ের মাধ্যমে বইটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। বইটির ফ্ল্যাপ লিখেছেন বিশিষ্ট ছড়াকার জগলুল হায়দার।
‘কইতরে বই পড়ে’ প্রতিটি ছড়াতেই যেন শৈল্পিকভাবে ছন্দের অমৃত ঝংকারে তুলে ধরেছেন মাহমুদ মেঘ। যা আমিসহ শিশুমনা সকল পাঠককে মোহনীয়ভাবে কাছে ডাকবে সর্বক্ষণ। আমি মনে করি একটি নিখাঁদ শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ বলতে আমরা যা বুঝি তার পুরোটাই এই শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থটি। তার ঋদ্ধ লেখা ছড়াগুলো শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বোদ্ধা পাঠকের চেতনায় নাড়া দিতে সক্ষম। লেখায় দার্শনিকতার ছোঁয়া অনুভব করা যায়। অসাধারণ এই ছড়াগ্রন্থটি এক বসাতেই পড়ে শেষ করা সম্ভব। প্রতিটি ছড়া অসাধারণ। ‘কইতরে বই পড়ে’ থেকে তার একটি ছড়া এখানে তুলে ধরছি। ছড়ার শিরোনাম ‘আয়োজন’।
মেঘ মেঘ বলেছে বৃষ্টি হবে
চাঁদ বলেছে হবে না
চাঁদ বলেছে বৃষ্টি হলে
জোছনা তবে রবে না।
বৃষ্টি বলে ঝরবো না আজ
ঝরবো তবে কাল কি?
কালতো আবার পরীর বিয়ে
ভিজেই যাবে পালকি!
পরী বলে কাল হবে না
আজকে তুমি ঝরো,
দাও ভিজিয়ে আকাশ মাটি
আমার বসত ঘরও!
বইটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।