জানে আলম
কবি ও লিটল ম্যাগ সম্পাদক মনসুর আজিজ। আমার দীর্ঘদিনের সাহিত্য বন্ধু। সাহিত্যের জন্য নিরলস নিবেদিত প্রাণ। ২৪ এর বিপ্লবী কবিদের কবিতা অনলাইন আড্ডাপত্রে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। আবার তা ছাপার অক্ষরেও। যা কিছু সত্য যা কিছু সুন্দর তা প্রকাশ করা কবি সাহিত্যকদের দায়িত্ব।
২৪ এর বিপ্লবে ছাত্ররা যে ভূমিকা রেখেছে তা অনবদ্য। ছাত্রদের দ্বারা সংগঠিত এ ধরনের বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের এ বিপ্লবকে আমদের কবি সাহিত্যিকদের উচিত কাব্য সাহিত্যে তুলে ধরা। যাতে করে যুগে যুগে কালে কালে প্রজন্মে প্রজন্মে তা পঠিত হতে থাকে। এবং মানুষ তা জানতে পারে। কুরআন পড়ে ফেরাউন সম্পর্কে জানবে। কবিতা পাঠ করেও যাতে পরবর্তী সময়ের ফেরাউন আবু লাহাবদের সম্পর্কে জানতে পারে। কবিদের এটিও একটি মহৎ কাজ।
আড্ডাপত্র-গণঅভ্যুত্থানের কবিতা ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ দেশের বরেণ্য কবিদের কবিতা স্হান পেয়েছে। অনেক ছড়াকারদের ছড়া স্হান পেয়েছে।
শুরুতেই মনসুর আজিজের প্রবন্ধ -
২৪ এর ছাত্র অভ্যুত্থান কবিতা ও ছড়ায় প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি। তিনি সেখানে বিপ্লবের বিস্তারিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন সাবলীল ভাবে। এরপর দীর্ঘ কবিতা। দীর্ঘ কবিতায় প্রথমেই আশির দশকের খ্যাতিমান কবি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক আবদুল হাই শিকদারের কবিতা। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে লিখেছেন “আমরা মানুষ আমরা এসেছি। “
আশির দশকের আরেক শক্তিমান কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। লিখেছেন কবিতা “অস্বীকার করি না।” কবিতায় তিনি লিখেন-
জলকামান আমার ভাই
টিয়ারসেল আমার বোন
রাবার বুলেট খেলার সাথি
ওদের লেলিয়ে দিয় কি লাভ”
এ ধরনের সকল কবিতাই ২৪এর বিপ্লবে উজ্জীবিত।
“বাংলাদেশের জমিনে নাজিল হয়েছে ঝাঁক ঝাঁক আবাবিল পাখি।
ক্ষমতার নাভিমূলে দিয়েছে ঠোকর।
কাঁপিয়ে দিয়েছে নয়া আবরাহার মসনদ।”
সম্পাদক কবি মনসুর আজিজের জমিনের আবাবিল কবিতার এ কথা যেন সবারই মনের কথা।
২৪ এর বিপ্লবী ছাত্রদের মহান আল্লাহ জাল্লেশান যেন আবাবিল করে তুলছিলেন ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে।
শাহীন রেজার কবিতা “ইয়ামিন, প্রিয় পুত্র আমার,। কবিতাটি কি মায়াবী! কি দরদ ভরা! দু চোখ ভিজে যায়। কবি যেন হৃদয়ের সকল সুরভি উজাড় করে ঢেলে দিয়ে শহীদ ইয়ামিনকে নিয়ে লিখেছেন কবিতাটি। ইয়ামিনকে নিয়ে আরো একটি কবিতা লিখেছেন কাজী জহিরুল ইসলাম। সাঁজোয়া থেকে গড়িয়ে পড়া শহীদ ইয়ামিনের দেহ। মীর মাফুজুর রহমান মুগ্ধকে লিছেন কবি আমিনুল ইসলাম ভিস্তিওয়ালা মুগ্ধ। আরো অনেক কবির কবিতায় মুগ্ধের বিষয় এসেছে।
তবে সবচে বেশি এসেছে আবু সাঈদ । অনবদ্য এক সাহসের স্মারক আবু সঈদ। কবি আফসার নিজাম লিখেছেন সাঈদবৃক্ষের অঙ্কুরোদগম। কবি নুরুল হক লিখেছেন “কোন উপমায় তোমাকে চিত্রিত করবো আবু সঈদ। হাজার বছর পঠিত হতে থাকবে যাদের কথা।
ছড়াকার ফরিদ সাঈদ লিখেছেন -
বুক পেতে দেয় আবু সাঈদ করলে তাকে গুলি।
সারাদেশে লাশের সারি কেমনে এ শোক ভুলি।
ছড়াকার রেজা কারিম জুলাই ২৪ ছড়ায় লিখেছেন -
অত্যাচারী শেখ হাসিনার অত্যাচারে পিষ্ট
চাইলে তুমি দেখতে পারো আম জনতার পৃষ্ঠ।
এ ধরনের অনেক কবি ছড়াকার তাদের কবিতা ছড়ায় এ বিপ্লবকে তুলে ধরেছেন।
এ সাময়িকীটিতে আমারও একটি কবিতা স্হান পেয়েছে। কবিতাটির নাম “তবু আমি দাঁড়ালাম।”
“একটি প্রসন্ন প্রসূন প্রত্যুষের প্রত্যাশায় প্রজন্ম আজ প্রসব যন্ত্রণায় যেন কাটাচ্ছে কাল।
একটি প্রজন্ম আজ জালিমের মসনদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।——-
আমি তাদের পাশে দাঁড়ালাম।।
আমি দাঁড়ালাম
নারকেল বাড়িয়ার বাঁশেরকেল্লায় মহান তিতুমীর যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। “
কবিতাটিতে অবশ্য আমার সে সময়ের কঠিন পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।
কবি মজিদ মাহমুদ তার যুগসেনা কবিতায় বলেন -
“এখনো যারা ঘুমিয়ে আছে -কবিতার মতো রহস্যময়।
বলো তরুণেরা সমস্বরে -এ রাষ্ট্র তোমাদের নয়।”
সত্যিই এ রাষ্ট্র মোনাফেকদের জন্য নয়। ফেসিস্টদের জন্য নয়। তাইতো তারা ইবলিশের মতো পালিয়ে অন্য রাষ্ট্রে নিয়েছে আশ্রয়।
কবি ও সম্পাদক মনসুর আজিজকে ধন্যবাদ এমন একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করার জন্য। আশাকরি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। চিরকাল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকবে কবি ও কবিতা।