চঞ্চল শিহাব
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, যে ভাষার জন্য আন্দোলন করে মাতৃভাষা ফিরে পেয়েছি। পরিবর্তনই ভাষার ধর্ম। ভাষার পরিবর্তনে অনেক শব্দ আসে, প্রয়োগ আসে, বাগধারা আসে। সেসব গ্রহণ এবং কিছু কিছু পুরোনো শব্দ বর্জন করা হয়ে থাকে। ভাষা ব্যবহারের ধারায় অনেক সময় পুরনো শব্দগুলো অব্যবহৃত থেকে যায়। আসে নতুন নতুন শব্দ। তবে পুরনো শব্দগুলো একবারে হারিয়ে যায় না। সাহিত্যে এবং অভিধানে তা টিকে থাকে।
অপিচ একটি পুরণো শব্দ। আজকাল এটা ব্যবহার হয় না। অপিচ শুনতে কি মনে হয়? এর অর্থটি খুঁজে দেখা যাক। অর্থ - আরও, অধিকন্তু, অপরপক্ষে। দেখ কাণ্ড, কত সহজ অর্থ।
অবধান একটি কম ব্যবহৃত শব্দ। এর অর্থ- (বিশেষ্য) মনোনিবেশ, অভিনিবেশ, প্রণিধান। কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী লিখেছেন - ’দুঃখ কর অবধান’। এটা তার চন্ডীমঙ্গল কাব্যে রয়েছে। [অব+ধা+অন]। ক্রিঃ- শুনিতে আজ্ঞা হউক। ’দুঃখ কর অবধান’ অর্থ - আমার দুঃখটা বুঝুন।
বাংলা ভাষায় তদ্ভব ও তৎসম শব্দ রয়েছে প্রচুর। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত থেকে অনেক শব্দ এসছে। অল্প কিছু শব্দ আছে স্থানীয় দেশি শব্দ। আর আরবি ও ফারসি থেকে প্রচুর শব্দ এসছে। কারণ ফারসি এক সময় আমাদের রাজভাষা ছিল। আর আরবি এসছে ধর্মীয় কারণে। আমাদের দেশে মুসলিম প্রাধান্য বহু যুগ আগে থেকে। ফলে ইসলামি পরিভাষা ও শব্দগুলো ভাষায় এসে মিশেছে। কবি নজরুলের কবিতায় এই ধরনের বহু শব্দের ব্যবহার আছে।
আম্মা লাল তেরি লাল কিয়া খুনিয়া । এখানে সবগুলোই আরবি ফারসি শব্দ। নজরুলের মোহররম কবিতার লাইন এটি। এখানে প্রথম লাল শব্দের মানে জাদু বা সন্তান। নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া, / ‘আম্মা ! লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া’। / কাঁদে কোন্ ক্রদসী কারবালা ফোরাতে, / সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে !
এখানে ব্যবহৃত অনেক শব্দ এখন আর তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না।
তদ্ভব ও তৎসম এ দুটি শব্দের মানে কি? যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। এর অর্থ {তৎ (তার)+সম (সমান)}=তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত। উদাহরণ : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, কৃষ্টি, তুষ্ট ইত্যাদি। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ক্রমপরিবর্তিত হয়ে বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। এর অর্থ, ‘তৎ’ (তার) থেকে ‘ভব’ (উৎপন্ন)। যেমন সংস্কৃত হস্ত, প্রাকৃত হত্থ, তদ্ভব হাত। সংস্কৃত চর্মকার, প্রাকৃত চম্মকার, তদ্ভব চামার ইত্যাদি। এই তদ্ভব শব্দগুলোকে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয়। পর্তুগীজ ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় বহু শব্দ এসছে। গীর্জা আর পাদরি শব্দদ্বয় পর্তুগীজ ভাষা থেকে আগত। একইভাবে, বালতি, হরতন, রুইতন, চিরাতন এইশব্দ গুলো পর্তুগীজ ভাষা থেকে আগত। আজ এ পর্যন্তই।