সুমন রায়হান
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ( জন্ম ২৬ অক্টোবর ১৯২৬ মৃত্যু ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১) হলেন তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সফল বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী। একই সাথে প্রখ্যাত আলেম, মুজতাহিদ এবং হাফেজে কুরআন। তার লেখা দু’শো চল্লিশ পৃষ্ঠার দাওয়াম ( আমার সংগ্রাম) পড়ে মনে হল, আহা জীবনে কী করলাম? দেশ, মানুষ তথা পৃথিবীর কল্যাণে কতটুকু ভুমিকা রাখলাম? কতবড় একজন দাঈ হলে তিনি বলতে পারেন, হকের জন্য কাজ না করা, আর বাতিলের জন্য কাজ করা- এই দু’ য়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
হক ও বাতিলের সংজ্ঞা তার কাছে পরিষ্কার। তিনি বলেন, আমরা জানি দুই গুন দুই চার হয়। বৃষ্টিপাতের সময়ও চার, সূর্য উঠলেও চার, এক সপ্তাহ আগেও চার, হাজার বছর পরেও চার।
অর্থাৎ সত্য কোন শর্তের সাথে আদৌ সম্পৃক্ত নয়। শর্ত যা- ই হোক না কেন, সব শর্তের আওতাধীনে যা সঠিক তা-ই হক। এর বিপরীতে কোন ব্যক্তি দুই গুন দুই সমান তিন বললে এটি নিঃসন্দেহে ভুল। মুষলধারে বৃষ্টির সময় বললেও ভুল, প্রখর রোদের সময় বললেও ভুল। যে কোনো শর্তের আওতাধীন যে কোনো ভুল প্রমাণিত হওয়াকেই ‘বাতিল’ বলে।
সম্ভবত জিহাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যাটি তিনিই করেছেন। ‘ জিহাদ হল, হককে বিজয়ী করা এবং সকল মানুষের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। দুনিয়ার কোনো শক্তিকে পরোয়া না করে নিজের সব শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।....... সব ইবাদতের জন্যই একটি নির্দিষ্ট- নির্ধারিত সময় রয়েছে। অন্যদিকে, জিহাদ যেকোনো অবস্থায়, যে কোনো সময় করার মতো একটি ইবাদত। সব ইবাদত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সীমিত। কিন্তু জিহাদ নিজের সর্বোচ্চ শক্তি- সামর্থ্যটুকু দিয়ে করা সম্ভব।’
আসলে প্রতিটি প্রবন্ধ দিয়েই আলাদা আলাদা বই করা সম্ভব। আর প্রতিটি প্রবন্ধই এত তথ্য সমৃদ্ধ যে আমি এ আলোচনায় আনা সাহস করতে পারছি না, তাই শিরোনামগুলো নিচে দেয়া হল। আশা করি আপনার পড়ার আগ্রহ জাগবে।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং মানুষ, শাশ্বত বিধান ইসলামের দিকেই আমাদের দাওয়াত, দুনিয়া শাসনকারী শক্তিবর্গ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, সাইপ্রাস মিশন,আমাদের সভ্যতা, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, শিল্পায়ন,ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা, শেষ কথা।
তখন তুরস্কে ইসলামের নামে যে কোনো ধরনের সংগঠন করা নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে তিনি প্রতিকী শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে ইসলাম বোঝাতেন। যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের পরামর্শে গঠন করেন ‘ মিল্লি গরুশ’ অর্থাৎ জাতীয় ভিশন।
বইটির শুরুতেই দেয়া হয়েছে ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের সংক্ষিপ্ত জীবনী। যা আপনাকে বইটি পড়ার প্রতি আরো আগ্রহী করে তুলবে। কীভাবে একজন হাফেজে কুরআন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন? দল গঠন করেন- সেই দল নিষিদ্ধ হলে আবার নতুন নামে দল গঠন করেন, নির্বাচনে অংশ নেন তারপর হোন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
দাওয়াম - সংগ্রাম ও সাফল্যের ঐতিহাসিক দলিল, ইসলামী আন্দোলনের কার্যকর পথপ্রদর্শক।
অনুবাদকের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি থাকলে ভালো হত।
ইসলাম ও রাজনীতি সচেতন প্রত্যেকের বইটি পড়া উচিত। বইটি অনুবাদ করেছেন বুরহান উদ্দিন, প্রকাশক - মক্তব প্রকাশন, ০১৩১০৯১৩৫৮৫।