কিশোর থ্রিলার হলো এমন এক ধরনের রোমাঞ্চকর গল্প যা তরুণ পাঠকদের জন্য লেখা হয় এবং এতে রহস্য, গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও অ্যাডভেঞ্চারের মতো ঐতিহাসিক এবং বাস্তব উপাদান থাকে। এই ধরনের বইগুলোতে সাধারণত কিশোর চরিত্ররা কোনো রহস্যের সমাধান করে বা বিপদ থেকে নিজেদের উদ্ধার করে, যেমন ‘সাইমুম’ বা ক্রুসেড সিরিজের বইগুলো। বাংলা ভাষায় ইসলামিক কিশোর থ্রিলার খুবই কম লেখা হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। ইংরেজী ভাষায় লেখা হেরি পটার সহ অন্যান্য জনপ্রিয় সিরিজগুলোর মতো বাংলা ভাষায় এমন কিশোর থ্রিলার সিরিজ খুবই কম, যাতে ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতিগুলির সাথে রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার এবং উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনীকে একত্রিত করে। এই ধরনের বই কিশোরদের ইসলামিক নীতি ও ইতিহাসের সাথে পরিচিত করে তোলে এবং তাদের মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত করে। সেই চেষ্টা থেকেই জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক হারুন ইবনে শাহাদাতের লেখা কিশোর থ্রিলার গাজী ব্রিগেড ‘‘অপারেশন মাসাদা’’ প্রকাশিত হয়েছে। যে সিরিজটি দীর্ঘদিন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় শিশু-কিশোর পত্রিকা মাসিক কিশোর কন্ঠে।

অপারেশন মাসাদার শুরু হয় ফিলিস্তিনের গাজার কিশোরদের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে। ইসরাইলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আল জাহার একটি স্কুলে আটকেপড়া ১০ ছাত্রের সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার কাহিনী নিয়ে লেখা, ‘ইসরাইলের অপারেশন মাসাদা’। তীক্ষè বুদ্ধির আমর, যোগ্য নেতা জায়াদ, খুদে বিজ্ঞানী আম্মার জায়েদি, আত্মবিশ্বাসী হাম্মাদ, জায়নবাদবিরোধী নেটিভ ইহুদি ডেভিড-আল জাহারার স্কুলের ধ্বংসস্তূপ থেকে গাজীর বেশে ফিরেছে। ওরা সত্যি কি মুক্ত? না। এই ফেরা মানেই মুক্তি নয়। মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে গাজী ব্রিগেড। এখন একটাই কাজ। একটাই স্বপ্ন। স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ওরা এ স্বপ্নের ছবি এঁকেছে অবরুদ্ধ স্কুলের ধ্বংসস্তূপে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে। গঠন করেছে বাঁচার আর আশার প্রতীক গাজী ব্রিগেড। মুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠাই এ ব্রিগেডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ইসরাইলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজার চারদিকে ঘিরে রেখেছে জায়নবাদী আগ্রাসী বর্বর সৈন্যরা। কিশোরদের স্বপ্ন এই ধ্বংসস্তূপ থেকে গাজীর বেশে ফিরে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেবে। মুক্ত-স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন গড়বে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সেই ধ্বংসস্তূপে বসেই ওরা গঠন করে গাজী ব্রিগেড। এভাবেই সিরিজটি আগাতে থাকে.......‘দুর্গের মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় ২৮টি কঙ্কাল, যার মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২৮টির মধ্যে ২৫টি গুহার ভেতর এবং দুটি পুরুষ ও একটি নারীর কঙ্কাল স্নানাগার থেকে উদ্ধার করা হয়। নারী কঙ্কালের শুধুমাত্র মাথা উদ্ধার করা হয়েছিল। পুরুষ কঙ্কালগুলোও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। মনে করা হয়, যারা পালাতে পারেননি, তাদের নৃশংসভাবে বলি দেয় রোমানরা। এই দুর্গ থেকেই পাওয়া যায় এক প্রাচীন খেজুরের বীজ, যার বয়স ২০০০ বছর। এই বীজ বপন করা হলে তার থেকে অঙ্কুরোদগমও হয়, যা পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন বীজের অঙ্কুরোদগম হিসাবে রেকর্ড গড়ে। মাসাদা উপত্যকা ও দুর্গে যাওয়ার জন্য দুটি পথ আছে। প্রথমটি পূর্ব দিকে সর্পিল পায়ে হাঁটা পথ, যা ডেড সি-র ওপর দিয়ে যায়। পশ্চিম দিকে রোপওয়ের মাধ্যমেও মাসাদায় পৌঁছানো যায়।

কিশোর থ্রিলার এবং নিজের সম্পর্কে লেখক হারুন ইবনে শাহাদাত বলেন, ছেলেবেলা থেকেই একা-একা পথ চলা। তারপর ধীরে ধীরে নিঃসঙ্গতার দেয়াল ভেঙে জনারণ্যে মিশতে গিয়ে একসময় উপলব্দি হল-ভেতরে ভেতরে আমি আসলে একা, ভীষণ একা। সেই থেকে চিন্তা একাকীত্বে থাকার কিশোরদের কিভাবে থ্রিলার সিরিজের মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধ, আচার-আচরণ, ইতিহাস-ঐতিহ্য শিক্ষা দেয়া যায়। সেই চিন্তা থেকেই কিশোর থ্রিলার লেখা শুরু। লেখক হিসেবে আমার পরিচয় কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক ও প্রচার বিমুখ। অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলা একদমই অপছন্দ। পড়তে ভালবাসি, যে কোন লেখা। লেখালেখিতে আগ্রহটা সেই স্কুল জীবন থেকেই। তবে সেগুলো কখনও কারো সামনে প্রকাশিত হয়নি। লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করি সবুজ প্রকৃতি, গাঁয়ের মেঠোপথ, নদী, পাহাড় আর ইসলাম ধর্মে সঠিক শিক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরতে। সাংবাদিকতা পেশা হওয়ার কারণে সময় আর সুযোগের অভাবে পেশাদার কিশোর থ্রিলার লেখক হয়ে উঠা এখনও সম্ভব হয়ে উঠেনি। ভালোবাসি ইসলাম, মুহাম্মদ সা. এর আদর্শ, দেশ ও দেশের মানুষ।

বই: ‘ইসরাইলের অপারেশন মাসাদা’, লেখক: হারুন ইবনে শাহাদাত, প্রচ্ছদ এঁকেছেন মো. সাইদুর রহমান। প্রকাশনায় বাংলা সাহিত্য পরিষদ, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। যোগাযোগ ০১৬৮১০৯৯৫২১।