জসীম উদ্দীন মুহম্মদ

গাজী গিয়াস উদ্দিন এর ব্যতিক্রমী গ্রন্থ “প্রবন্ধ এবং কবিতা সংগ্রহ “। সাহিত্যের অন্যতম দুটি প্রধান শাখা প্রবন্ধ এবং কবিতাকে একই সাথে মলাটবন্দী করার যে সাহসী কাজটি তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন; তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। একই মলাটে গ্রন্থটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশ প্রবন্ধ সংকলন। এগারো পৃষ্ঠা থেকে আটাত্তর পৃষ্ঠা পর্যন্ত। যে সকল প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে সূচিবদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যথাক্রমে, কবির ব্যক্তি নিয়তি এবং কাব্য অদৃষ্টবাদ, প্রাণের মূল্য, কথাসাহিত্যের পূর্বসূরি-উত্তরসূরি, মার্কসের চিন্তার ক্রমবিকাশ এবং ট্রাজেডি, উত্তরাধুনিক কবিতা, ধর্ম ও বিজ্ঞান, একুশ শতকের বক্তা কেমন হওয়া চাই, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতায় আশার বাণী, কবিতার প্রকরণ ও বিকিরণ, ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের সাহিত্য, লক্ষ্মীপুর জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং ভাষা আন্দোলনে লক্ষ্মীপুর ইত্যাদি। প্রতিটি প্রবন্ধ আমি গভীর মনোযোগ সহকারে পড়েছি। প্রবন্ধগুলো বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে বলে আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি।

আলোচ্য গ্রন্থটির দ্বিতীয় অংশ কবিতা সংগ্রহ। এই অংশটির বিস্তার তিরানব্বই পৃষ্ঠা থেকে একশত চুয়াল্লিশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে সর্বমোট একানব্বইটি কবিতা রয়েছে। যার অধিকাংশ কবিতাই আধুনিক ধারার এবং মুক্ত গদ্যে লিখিত। কবির কবিতায় জীবনবোধ, মানবপ্রেম, রোমান্টিসিজম, আধ্যাত্মিকতাসহ সমসাময়িক বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেয়েছে। এই যেমন: অশ্রুজলে আরশিনগর কবিতায় কবি বলেছেন, তুমি তাকালে ফুল ফুটে/ফুল বর্ষিত হয়/তাই তুমি তারকা/ মনের ঝরোকা; আমি তাকালে কেন/ ফুল ঝরে /বলতে পারো-কেন/ আমি ফিরি মথুরা বন্দরে..... সহজ-সরল, অনাড়ম্বর এবং মেদহীন ভাষায়ও যে এমন অসাধারণ শব্দের মায়াজাল বিস্তার করা যায়... তা কেবল জাতকবির পক্ষেই সম্ভব।

এই কবিতাটির ভাবের বিকাশও নানান ব্যঞ্জনাময়। কোন কোন পাঠক এই কবিতাটিতে মানব প্রেমের গন্ধ যেমন খুঁজে বেড়াবেন; তেমনি কেউ কেউ আধ্যাত্মিকতার সুগন্ধও খুঁজে পাবেন। কবিতার এই ভাববৈচিত্র আশাকরি যে কোনো শ্রেণি পেশার পাঠককেই কাছে টানবে।

মানব মনের একটি চিরন্তন জিজ্ঞাসা হল, আমি কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি এবং কোথায় যাব। অন্তহীন এই রহস্যের যেন কোনো কূল কিনারা নেই। যুগ যুগ ধরেই আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি নানাভাবে, নানান নামে অথবা বেনামে। কবি তার “মরমী সঙ্গীত” কবিতায় এই পুরাতন ভাবনাকেই নতুন রুপে আচ্ছাদিত করেছেন। কবি বলেছেন, ও চড়ুইরে... কি খুঁজিস- কি খেলিস শূন্যের মাজার/ (এই) দুনিয়াটা শূন্যের বাজার।।.... সত্যিই কি অসাধারণ মরমী ভাবনা! অথচ ভাষার কোনো বাহুল্য নেই। শব্দের বেসাতি নেই। তবুও যেন শব্দের নান্দনিক কারুকাজ। আর আমি মনে করি, এখানেই প্রিয়কবি গাজী গিয়াস উদ্দিন এর স্বাতন্ত্র্য এবং সার্থকতা।

আলোচ্য গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে মিজান পাবলিশার্স। প্রথম প্রকাশ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৫। স্বত্ব: লেখক নিজেই। প্রচ্ছদ করেছেন লুব্ধক রহমান। বইটি মলাট মূল্য ৩৫০/- টাকা।

আমি বইটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।