রাজধানীর ঢাকায় বায়তুল মোকাররম আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ কর্তৃক প্রকাশিত এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর, বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক ড. আহমদ আলীর রচিত “আধুনিক চিন্তাধারা ও মতবাদ” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি প্রফেসর ড. নকীব মুহাম্মদ নাসরুল্লাহ ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জনাব আব্দুস ছালাম খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন—"এই গ্রন্থটি বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে অত্যন্ত ব্যতিক্রম একটি বই, যা সমাজের প্রচলিত সকল ফেতনার রাজত্বকে চুরমার করে দিয়েছে।" বক্তা লেখকের রচিত অন্যান্য বইসমূহের প্রসংশিত উল্লেখ করে বলেন, "উম্মাহর জন্য উপকারী কাজ করার জন্য আলেম সমাজের পক্ষ থেকে এ ধরনের একাডেমিক অথচ সর্বসাধারণকে প্রভাবিত করবার মত গ্রন্থ আরও বেশী বেশী করে রচিত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত একটি রাস্ট্রকে সেক্যুলারিজম থেকে রক্ষা করবার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।" বক্তা আরও উল্লেখ করেন, "সমাজের ঘরে ঘরে আজ মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়া পশ্চিমা নারীবাদ ও ট্রান্সজেন্ডারীয় মতবাদকে রুখতে হলে আলেম সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।" পরিশেষে তিনি লেখকের ও সেন্টারের সকল বইয়ের বহুল প্রচার কামনা করেন।

বস্তুবাদ, উদারতাবাদ, মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, মুক্তচিন্তা, সেকুলারিজম, আধুনিকতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ও বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে লেখা নতুন গ্রন্থ ‘আধুনিক চিন্তাধারা ও মতবাদ’-এর ভূয়সী প্রশংসা করে বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. নকীব নাসরুল্লাহ বলেন— "প্রাঞ্জল ভাবে ও যুক্তিভিত্তিক রচয়িত এই গ্রন্থে লেখক বিভিন্ন মতবাদের সংজ্ঞায়ন করে এর বিপরীতে ইসলামের আধুনিক চিন্তাধারাকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করেছেন।" বক্তা আরও বলেন, "গবেষনাধর্মী বইটিতে লেখক চমৎকার ভাবে অন্যান্য প্রচলিত মতবাদের অসারতা উল্লেখ করেছেন যেমন, তেমনি ইসলামের বিধানগুলোকে একে একে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য বলে প্রমান করেছেন, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী।" পরিশেষে তিনি বইটির বহুল প্রচার কামনা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি জনাব আব্দুস ছালাম খান বলেন— "এ গ্রন্থ এটাই প্রমান করেছে যে, ইসলামই হচ্ছে মানবরচিত সকল মতবাদের মোকাবেলায় একমাত্র গ্রহনযোগ্য বিধান ও দ্বীন। এজন্য সকলের উচিত বিভিন্ন মতবাদ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে নিজের ঈমান রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালানো।"

গ্রন্থকার প্রফেসর ড. আহমদ আলী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “বস্তুবাদ, উদারতাবাদ, মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, মুক্তচিন্তা, সেকুলারিজম, আধুনিকতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেকের কাছেই ইন্টেলেকচুয়াল ফ্যাশন হয়ে গেছে। আবার আধুনিক সংস্কৃতি মানুষকে টেনে নিচ্ছে বস্তুবাদ, আত্মসুখবাদ, অশ্লীলতা, সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডারিজম আর উগ্র নারীবাদের দিকে।”

লেখক আরও বলেন— “তিনি এই বইয়ের মাধ্যমে আধুনিক ও প্রাচীন চিন্তাধারার মধ্যকার পার্থক্য, দ্বন্দ্ব এবং সংযোগকে একটি গভীর ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনায় উপস্থাপন করেছেন। বইটিতে দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব ও রাজনীতির বিভিন্ন মতবাদ যেমন মার্কসবাদ, উদারবাদ, অস্তিত্ববাদ, ইসলামী চিন্তাধারা ইত্যাদির সমালোচনামূলক ও তুলনামূলক আলোচনা রয়েছে।” লেখক আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে— “উক্ত গ্রন্থের মাধ্যমে আধুনিক ফিতনাগুলোর পরিচয়, ইসলামের আলোকে সঠিক ব্যাখ্যা এবং আগামী প্রজন্মকে বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে বাঁচানোর উপায় হিসেবে কাজ করবে।”

সভাপতির বক্তব্যে জনাব মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বইটির গুরুত্ব, প্রাসঙ্গিকতা এবং এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের চিন্তাচর্চায় সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ে গবেষণাধর্মী এই প্রয়াসের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন— "এই গ্রন্থ তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং সমাজে ইতিবাচক চিন্তার বিকাশে ভূমিকা রাখবে। এটি শুধুমাত্র একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন নয়, বরং একটি চিন্তাচর্চার যাত্রাশুরু—যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ, যুক্তিবাদ, মানবিকতা এবং আধুনিক বিশ্বের জটিল বাস্তবতা নিয়ে গভীর আলাপ-আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।”

বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, গবেষক, আলেম, সাংবাদিক, সাহিত্যপ্রেমী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুল সংখ্যক উৎসাহী পাঠক উপস্থিত ছিলেন।