শাহাদাৎ সরকার
সাংবাদিক ও গবেষক সরদার আবদুর রহমান রচিত ‘মোহাম্মদ ঘোরী ও পৃত্থীরাজের লড়াই’ ইতিহাস প্রিয় পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো কিতাব। এই কিতাবে প্রাচীন ভারতে পরপর দুইবার সংগঠিত তরাইনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, ফলাফল ও তৎকালীন আর্থ-সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক।
ইতিহাসের নানান বৈচিত্র্যে ভরপুর ভারতের ইতিহাস। কি প্রাচীন, কি মধ্য আর কি আধুনিক যুগÑসর্বকালেই রাজনৈতিক, সামরিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আর ঐতিহাসিকতায় সমৃদ্ধ এক সাম্্রাজ্যের পরিচিতি বহন করে চলেছে এই ভারতভূমি। তারই একটি অংশ হয়ে আছে আফগানিস্তান থেকে আগত অভিযাত্রী মোহাম্মদ ঘোরী ও ভারতের রাজপুত বীর পৃত্থীরাজের লড়াই।
পৃথ্বীরাজ ৩য় পরিচিত ছিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান বা রাই পিথোরা নামে। তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজপুত শাসকদের একজন বলে মনে করা হয়। তিনি চৌহান রাজবংশের বিখ্যাত শাসক যিনি একটি ঐতিহ্যবাহী চাহামান অঞ্চলকে শাসন করেছিলেন।
তিনি বর্তমান রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। যদিও তিনি আজমীরকে তার রাজধানী হিসেবে রেখেছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে অনেক লোক তাকে ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্র দিল্লির রাজা হিসাবে বর্ণনা করে।
অন্যদিকে মোহাম্মদ ঘোরী পার্সিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম ছিলেন। তাঁকে ইসলামী ও ভারতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতিদের একজন বলেও বিবেচনা করা হয়। যদিও তিনি অনেক যুদ্ধে পরাজিত হন। তবে তিনি কখনই বিজয় থেকে বিচ্ছিন্ন হননি।
অতঃপর তিনি একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার গৌরব অর্জন করেন। তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আরও প্রদেশকে তাঁর সাম্রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা। একজন বুদ্ধিমান জেনারেল হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ইসলামের সুন্নি বিশ্বাসের অনুশীলন করতেন এবং তিনিই ভারতীয় উপমহাদেশে সত্যিকার অর্থে ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
একজন অত্যন্ত দক্ষ প্রশাসক হওয়ার কারণে মোহাম্মদ বুঝতে পেরেছিলেন যে রাজত্বের জন্য তার কেবল দক্ষ দরবারীদের প্রয়োজন ছিল না, তার উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য এবং তার প্রত্যাবর্তনের পর সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে কিছু নিকটতম সহযোগীরও প্রয়োজন হবে। সে মোতাবেক তিনি কুতুবউদ্দীন আইবেকের মতো নেতৃত্ব তৈরি করেন। যা সত্যিকার অর্থে ভারতে ঘোরীর শূন্যস্থান পূরণ করে।
মোহাম্মদ ঘোরীর ভারত অভিযান কেবল পৃত্থীরাজ চৌহানকে পরাজিত করার জন্যই বিখ্যাত হয়ে নেইÑভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত হিন্দু শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটানোর একটি বিরাট উপলক্ষ হয়ে আছে। সেই সঙ্গে যেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই জয়-পরাজয়ের ফয়সালা হয়েছিল সেই তরাইনের যুদ্ধও পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত রণকৌশলের উদাহরণ হয়ে আছে।
এ গ্রন্থে এগারশো খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয় তার ইতিবৃত্তও তুলে ধরছেন লেখক।
ফলে এটি নিছক একটি সমর-বিবরণী হিসেবে নয়, সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিতসমূহ এতে পরিস্ফুটিত হয়েছে। বইটি ইতিহাস প্রিয় পাঠকদেও পাশাপাশি সাধারণ পাঠকের চাহিদা পূরণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বইটি প্রকাশ করেছে দিব্যপ্রকাশ, প্রচ্ছদ : হাসানুল বান্না, মূল্য: ৩৫০ টাকা। বইটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করছি।